ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মধ্যে
প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শেখ আব্দুলস্নাহ শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ, ঢাকা
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদকে ঘিরে করা হয় নানা আয়োজন। আর এই নানা আয়োজন নিয়ে বছর ঘুরে আবারও দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। মুসলিম ধর্মের বছরে সবচেয়ে বড় দুইটি অনুষ্ঠান হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় বিধানমতে প্রতিবছর আরবি সাল অনুযায়ী রমজান মাসে দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর পালন করে থাকেন। তাই প্রতিবছরের মতো বছর ঘুরে আবারও দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। ইতোমধ্যে চারদিকে শুরু হয়ে গেছে ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি। দোকান, হাটবাজার, বাস ও ট্রেন স্টেশনে প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়; রয়েছে কারও কেনাকাটার তাড়া আবার কারও বাড়ি ফেরার তাড়া। ব্যবসায়ীরা রয়েছেন মহাব্যস্ত। তাদের দরকার ঈদের বাজারে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বন্ধ ঘোষণা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা দিয়েছে। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিচ্ছেন নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি। অপরদিকে যারা চাকরি করেন তারা চেয়ে আছি কর্তৃপক্ষের মুখের দিকে; কবে ঘোষণা পাবেন তাদের ছুটি কথা। আবার অনেকে হিসাব মেলাচ্ছেন এই ঈদে বাড়ি যাবে, নাকি কোরবানির ঈদে বাড়ি যাবে। আর এভাবে ঈদের দিন যতটা কাছে আসবে মানুষের মনে বাড়ির ফেরার তাড়না ততটা সৃষ্টি হবে। প্রতিটি মানুষের ইচ্ছে ঈদে আপন নীড়ে ফেরা, পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা। আবার এবছর ঈদ ও দুর্গাপূজা একই সময় হওয়াতে আরও বেশি জমজমাট ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। তাই এমতাবস্থায় ঈদের আনন্দ নির্বিঘ্নে কাটাতে এবং ঈদের আনন্দ সবার মধ্যে ভাগাভাগি করতে নিতে হবে সর্বাত্মক প্রস্তুতি।
ঈদ এলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় যাতায়াতের বিষয়টি নিয়ে। প্রতিটি বাস টার্মিনাল, ট্রেন স্টেশন, লঞ্চ ঘাটে ঘরফেরা যাত্রীদের পড়ে উপচেপড়া ভিড়। টার্মিনাল-স্টেশনে জায়গার সংকুলান থাকার কারণে যাত্রীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় এবং পাশাপাশি বেড়ে যায় ভাড়া সিন্ডিকেটের কারসাজি। পরিবহণ ভাড়া বেড়ে যায় দিগুণ। এ ছাড়া ঈদ এলে সড়ক দুর্ঘটনা বহুগুণে বৃদ্ধি পাই। তাই যাতায়াত ভোগান্তি নিরসন করতে এবং সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদের সাধারণ মানুষের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি খুব ভালোভাবে নজরদারি করতে হবে।
ঈদের আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে আমাদের কিছু নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যদি এসব দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো আমরা খেয়াল রাখি তাহলে ঈদ সব শ্রেণির মানুষের কাছে হবে আনন্দময়। যেমন : বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা টিউশনি করে নিজেদের খরচ নিজেরা চালাই। টিউশনির টাকাটাই তাদের একমাত্র সম্বল। টিউশনির টাকাটা ঈদের আগে পেলে একজন শিক্ষার্থী অর্থনৈতিকভাবে অনেক উপকৃত হয়। তাই অভিভাবকদের উচিত ঈদের আগে টিউশন ফী পরিশোধ করা। আমাদের দেশে অবহেলিত শ্রেণির ভিতরে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়ে আছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। অনেক গার্মেন্টস মালিক ঈদের সময় শ্রমিকদের বেতন আটকে দেয়। তাই গার্মেন্টস মালিকের উচিত ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা। এ ছাড়া বর্তমান চলমান দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্ররা অসহায় হয়ে পড়েছে। সচ্ছলদের উচিত ঈদ উপলক্ষে এসব পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা। সম্ভব হলে অসচ্ছল পরিবারকে ঈদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ করা। যদি এভাবে আমরা পরস্পর সাহায্য ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিই এবং নিজ নিজ জায়গা থেকে যদি আমরা সচেতন হই তাহলে ঈদ হবে সবার জন্য আনন্দময়।