আশির দশকের গোড়ার দিকে দেশে পোশাক শিল্পের উত্থান শুরু। আর নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই পাট ও পাটজাত পণ্যকে হটিয়ে তৈরি পোশাক দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়। তখন পোশাক শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি ছিল ৬২৭ টাকা। ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো মজুরি বোর্ড গঠিত হয়। সেই বোর্ড নূ্যনতম মজুরি ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৯৩০ টাকা নির্ধারণ করে। ২০১০ সালে পোশাক শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি ৮০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়। ২০১৮ সালে গঠিত মজুরি বোর্ড পোশাকশ্রমিকের মজুরি ৫১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে। বর্তমানে নূ্যনতম মজুরি নির্ধরণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের লড়াই যুগ যুগ ধরে চলছে। গত ২৮ বছরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ২৪ গুণ। তার বিপরীতে পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি বেড়েছে ১৩ গুণ। নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবেই বেড়েছে।
সম্প্রতি বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, ২০২১ সাল থেকে চলতি মাসের এখন পর্যন্ত ৩৯৩টি নতুন কারখানা বিজিএমইএর সদস্য পদ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে নতুন বাজারগুলোতে আমদের রপ্তানি উলেস্নখযোগ্যভাবে বেড়েছে। নতুন বাজারে গত ১৪ বছরে দশ গুণ রপ্তানি বেড়েছে। বৃহস্পতিবার বিজিএমইএ কার্যালয়ে ' রোডম্যাপ টু রিকভারি' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, চলমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে। তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমে আসায় এবং পোশাকের খুচরা বিক্রিতে কিছুটা গতি সঞ্চার হওয়ায় চলতি জানুয়ারি-মার্চ সময়ে আমাদের রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ফিরে এসেছে। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আশার বিষয় হচ্ছে, শিল্পে আমরা নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের পদচারণা দেখতে পাচ্ছি।
এটা সত্য, বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংকটে আমাদের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে একই সময় বেশকিছু নতুন কারখানা ও নতুন বিনিয়োগ এসেছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অনুপ্রেরণা। রপ্তানি খাতে মন্দাভাব কাটিয়ে উঠার জন্য বরাবরই বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার তৈরি ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নতুন বাজারগুলোতে রপ্তানি উলেস্নখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা বিগত ১৪ বছরে ১০ গুণ বেড়েছে, অর্থাৎ ৮৪৯ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৮.৩৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে নতুন বাজারগুলোতে পোশাক রপ্তানি ১০.৮৩ শতাংশ বেড়েছে, বিশেষ করে তুরষ্কে ৬৩.৩৫ শতাংশ, সৌদি আরবে ৪৭.১৯ শতাংশ, চীনে ৪৪.৭৬ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩৬.৫৪ শতাংশ, রাশিয়ায় ২৫.৬৫ শতাংশ, অষ্ট্রেলিয়ায় ২১.২৯ শতাংশ, দক্ষিন কোরিয়ায় ১৭.১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো খবর। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তৎপর ও মনোযোগী হতে হবে।