সীমান্তে আতঙ্ক সতর্কতা জরুরি
প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
যে কোনো ধরনের ঘটনায় সীমান্তে আতঙ্ক সৃষ্টি হলে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাত কিছুতেই থামছে না। প্রায় প্রতিদিনই গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে সীমান্তবর্তী অঞ্চল। আর এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক কাটছে না সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্থানীয়দের, যা উদ্বেগজনক। আর এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ করা দরকার- সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা, পৌরসভার এবং সাবরাং-এর বিপরীতে ব্যাপক গোলাগুলি ও গোলার বিকট শব্দ হয়। এতে বাংলাদেশ সীমান্ত কেঁপে ওঠে।
আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। সীমান্তবর্তী মানুষের সাবধানতা অবলম্বন করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বলা দরকার, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, টেকনাফের হ্নীলা ইউপির লেদা ও চৌধুরীপাড়া সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একাধিক ঘাঁটি রয়েছে। এসব ঘাঁটিতে উড়ছে মিয়ানমারের পতাকা। অবস্থান শক্ত করেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি। তবে এসব ঘাঁটি দখলে নিতে আরাকান আর্মি কৌশল পাল্টে রাতে আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছে। তার পাল্টা জবাবও দিচ্ছে বিজিপি। কিন্তু লক্ষণীয়, মিয়ানমারের চলমান ওই সংঘাতের প্রভাব পড়ছে এপারের সীমান্তের বাসিন্দাদের ওপর। ফলে বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি খুবই আতঙ্কের। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতা বজায় রাখাসহ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই।
প্রসঙ্গত এটাও বলা দরকার, এবারই প্রথম নয়, এর আগেও সীমান্তে আতঙ্কের বিষয় সামনে এসেছে। ফলে সর্বাত্মক পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখতে হবে। এছাড়া মিয়ানমারের সংঘাতের কারণে বন্ধ রয়েছে নাফ নদীতে মাছ শিকার। যার কারণে ঘাটে নোঙর করা রয়েছে অসংখ্য ট্রলার। আর দীর্ঘ সময় মাছ শিকারে যেতে না পেরে নষ্ট হচ্ছে ট্রলারের ইঞ্জিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। আর এমন পরিস্থিতিতে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে নাফ নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা কয়েক হাজার জেলে। এটিও এড়ানো যাবে না। জানা যায়, সীমান্তে গোলাগুলি, মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কায় নাফ নদীতে বন্ধ রয়েছে মাছ শিকার। যার কারণে বিপাকে পড়েছেন ১০ হাজারের বেশি জেলে পরিবার। টেকনাফ (২ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানিয়েছেন, 'গোলাগুলির বিষয়গুলো তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘাত। তবে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যাতে মাদক ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে ব্যাপারে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে।'
আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও এর আগে উঠে এসেছিল- ফলে সামগ্রিক বিষয় এড়ানোর সুযোগ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সতর্কতা বজায় রাখা এবং কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া আমলে নেওয়া দরকার যে, সাধারণভাবে মনে করা হয়, রাখাইন রাজ্যে উত্তেজনা বিরাজ করলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগও নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে সীমান্তে সব ধরনের সতর্কতা প্রয়োজনে বাড়াতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার যে আশঙ্কা উঠে এসেছিল সেটা আমলে নিতে হবে, অন্যদিকে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যেমন উদ্যোগ জারি রাখতে হবে, তেমনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইসু্যর কোনো গ্রহণযোগ্য বা দৃশ্যত সমাধান হয়নি- যা উদ্বেগের। সঙ্গত কারণেই মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি বা যে কোনো কারণেই হোক বাংলাদেশে রোহিঙ্গা যেন আবার প্রবেশ করতে না পারে সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।