রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পাকিস্তানের তুলনায় আমরা এখন অনেক ভালো আছি

অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া রিজার্ভ, ডলারের দাম, রপ্তানি, মূল্যস্ফীতি, মাথাপিছু আয় অর্থনীতির এসব সূচকেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
রেজাউল করিম খোকন
  ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
পাকিস্তানের তুলনায় আমরা এখন অনেক ভালো আছি

আমাদের অনেক রাজনীতিবিদ বিভিন্ন সময়ে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বারবার একটি কথা উচ্চারণ করেন, পাকিস্তান আমলে তুলনামূলকভাবে আমরা অনেক ভালো ছিলাম। কিন্তু তারা বর্তমান পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার তুলনা করতে ভুলে যান আশ্চর্যজনকভাবে। বাংলাদেশ ৫৩ বছরের পথ পরিক্রমায় স্বাধীনতা অর্জনের পরবর্তী সময়কালে এখন যে অবস্থায় এসে পৌঁছেছে তা সত্যি এক অনন্য বিস্ময়। সারা বিশ্বে এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বাংলাদেশ। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে উন্নয়নের যে গতি লাভ করেছে তা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টর্ানেল, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপন, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী বিদু্যৎ প্রকল্প, পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্র, পায়রা বন্দর, দেশজুড়ে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি আমাদের এগিয়ে চলার উজ্জ্বল প্রমাণ দেয়। আগামী দিনগুলোতে উন্নয়নের গতি আরও বেগবান হবে আশা করা যায়। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ বেশ কষ্টে আছেন। অনেকেরই দুর্বিষহ অবস্থা চলছে। আমাদের অর্থনীতিতে নানা সংকট চলছে দীর্ঘ সময় ধরে। দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় গুরুতর কিছু সমস্যা রয়েছে। খেলাপি ঋণের বোঝা কমানো যাচ্ছে না বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ সত্ত্বেও। ইদানীং অপেক্ষাকৃত দুর্বল কিছু ব্যাংককে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ সাম্প্রতিক সময়ে কোটি ছাড়িয়েছে। বেশ কিছু কঠিন শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে রিজার্ভ সংকট সামাল দিতে আইএমএফ থেকে ধার করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচকে অনেক এগিয়ে রয়েছে। মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সাহায্য করতে গিয়ে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। এরপর দারিদ্রের কষাঘাতে ধুঁকতে ধুঁকতে ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার যোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সব চাইতে বেশি অবদান তৈরি পোশাক খাতের। এই শিল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মোট প্রবৃদ্ধির ৬-৮ শতাংশই আসছে পোশাক খাত থেকে। বাংলাদেশের এই শিল্পকে বর্তমানে উন্নত বিশ্বসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো অনুকরণ করছে। স্বাধীনতার পরে যে শিল্প আমাদের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়েছে তার একমাত্র মাধ্যম কিন্তু এই পোশাক শিল্পই। বিশ্বের বুকে নিজেদের কঠোর শ্রম ও উৎপাদন দক্ষতা দেখাতে পারার প্রমাণ মেলে এই শিল্পের মাধ্যমে। এই শিল্পের ওপর ভর করেই বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৪১তম স্থানে উঠে এসেছে। বিশ্বের দ্রম্নত বর্ধনশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ এখন পঞ্চম। এককালের 'তলাবিহীন ঝুড়ি' ২০৩৫ সালে হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। ২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় ২৫টি অর্থনীতির দেশের একটি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর)। অথচ স্বাধীনতার ঠিক পর থেকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনা শোনা যেত। মূলত এ সব দুর্ভাবনা ছড়িয়েছিল একাত্তরের যুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তান সরকার। তাদের বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশ যদি প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে অর্থনৈতিক দিক থেকে একটা টেকসই রাষ্ট্র হবে না। মূলত এই ধারণা থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে একটি ভিক্ষার ঝুলি বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রথম যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিল, সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে হতাশার কথাই ছিল বেশি। বিশ্বব্যাংক বলেছিল, 'সবচেয়ে ভাল পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ একটি নাজুক ও জটিল উন্নয়ন সমস্যার নাম। দেশের মানুষে গরিব। মাথাপিছু আয় ৫০ থেকে ৭০ ডলার- যা গত ২০ বছরেও বাড়েনি। একটি অতি জনবহুল দেশ এবং জনসংখ্যা আরও বাড়ছে এবং দেশটির মানুষ অধিকাংশই নিরক্ষর।' এরপর আওয়ামী লীগের একটানা ক্ষমতাকালে সেই বাংলাদেশ এখন অন্য দেশকে সাহায্য, সহযোগিতা করছে। উন্নয়নের মহাসড়কে ছুটে চলা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তরণের পথে রয়েছে। ৭৭ বছর আগে স্বাধীন হওয়া পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এমনকি ভারতকেও ছুঁয়ে ফেলেছে প্রায়। ৫৩ বছরের পথপরিক্রমায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। বিদেশিদের দৃষ্টিতে স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশ ছিল এক তলাবিহীন ঝুড়ি। আর এখন সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভরতায় বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন এক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। দিনে দিনে সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টে গেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো। এটা আরোপিত ভাবে নয়, স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ছিল এক সময়ে এ অঞ্চলে। কিন্তু সেই কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে ক্রমশ বেরিয়ে এসে শিল্প ও সেবা খাতমুখী হয়েছে আমাদের অর্থনীতি। এখন আর আমাদের অর্থনীতিতে কৃষির একচ্ছত্র দাপট নেই আগের মতো। নানা চড়াই উৎরাই পথ পাড়ি দিয়ে আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু গড় আয় ও আয়ু, নবজাতক ও মাতৃমৃতু্য হ্রাস, টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রাথমিকে শতভাগ ভর্তি মিলিয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটেছে কৃষি খাতে। বাংলাদেশ মাছ, সবজি, ফল, মুরগি, ডিম উৎপাদনে বিশ্ব পর্যায়ে পণ্য হচ্ছে। এর কোনো কোনোটিতে আমাদের অগ্রগতি বিশ্ব পর্যায়ে তৃতীয়-চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। যে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ, সেই পাকিস্তানই এখন আর্থসামাজিক প্রায় সব সূচকেই পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের চেয়ে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত স্বাধীনতা অর্জনের ৭৭ বছরে যে সফলতা অর্জন করতে পারেনি, বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে গত ৫৩ বছরে।

বিশ্বের কোনো দেশ অর্থনীতি নিয়ে সংকটে পড়লে ঋণের জন্য প্রথমেই যে সংস্থাটির কথা মনে পড়ে, সেটি আইএমএফ। বিভিন্ন দেশকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধারে নানা শর্তে ঋণ দেয় সংস্থাটি। অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এসব সমস্যা সামাল দিতে দুটি দেশই বারবার দ্বারস্থ হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে। বাংলাদেশের চেয়ে বেশিবার আইএমএফের ঋণ নিয়েছে পাকিস্তান। এ পর্যন্ত ২৪ বার আইএমএফের শরণাপন্ন হয়েছে পাকিস্তান। নিজেদের অর্থনীতি ঠিক করতে আইএমএফের সঙ্গে নানা শর্তের ঋণ কর্মসূচিতে জড়িয়েছে দেশটি। অন্যদিকে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১১ বার আইএমএফের সহায়তা নিয়েছে বাংলাদেশ। অবশ্য ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর পাকিস্তানকে আইএমএফের কাছে যেতে হয়েছে ২১ বার। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত অনেক মজবুত হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের অর্থনীতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। মাথাপিছু আয়, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের তুলনায় এখন পাকিস্তানের অর্থনীতি অনেক দুর্বল ও ভঙ্গুর। দেশটির রাজস্বব্যবস্থা এত বছরেও ভালো হয়নি। সামরিক খাতে পাকিস্তান বেশি খরচ করে। অর্থনীতি দুর্বল বলে পাকিস্তানকে বারবার আইএমএফের কাছে যেতে হয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে রক্ষণশীল নীতি নিয়ে বাজেট ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদেশি ঋণ নিয়ে কখনো বিপাকে পড়েনি। আইএমএফের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫০ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের সদস্য হয় পাকিস্তান। আর ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসার দুই মাসের মাথায় আইএমএফের দ্বারস্থ হন। ওই বছর আইএমএফের সঙ্গে আড়াই কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে পাকিস্তান। এরপর ১৯৬৬ ও ১৯৬৯ সালে আইএমএফ থেকে যথাক্রমে ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার ও সাড়ে ৭ কোটি ডলার ঋণ নেয় পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতি আরও খারাপ হয়। ফলে ১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পরপর তিন বছর আইএমএফের কাছে যায় পাকিস্তান। তখন তিনবারে সব মিলিয়ে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার ঋণ নেয় দেশটি। এরপর দেশটি সবচেয়ে বেশি আইএমএফের দ্বারস্থ হয় নব্বইয়ের দশকে। ওই দশকে সর্বমোট ছয়বার আইএমএফের ঋণ নিতে হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে সর্বশেষ অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয় পাকিস্তানে। পরবর্তী ২ বছরে এ সংকট আরও তীব্র হয়। তাই ২০২২ সালে আইএমএফের কাছে ৩০০ কোটি ডলার জরুরি ঋণ সহায়তা চায় পাকিস্তান সরকার। গত বছর এ ঋণ দিতে সম্মত হয় আইএমএফ। সব মিলিয়ে পাকিস্তান এ পর্যন্ত আইএমএফ থেকে প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের মতো ঋণ নিয়েছে। অপর দিকে ১৯৭২ সালে আইএমএফের সদস্য হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি কম চাপে পড়েছে। তাই আইএমএফের কাছেও যেতে হয়েছে কম। বাংলাদেশ প্রথম আইএমএফের দ্বারস্থ হয় ১৯৭৪ সালে। ওই বছর ৩ কোটি ১২ লাখ ডলার ঋণ নেয় বাংলাদেশ। এরপর ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে দুইবার আইএমএফের ঋণ নিতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশিবার আইএমএফের শরণাপন্ন হয় আশির দশকে। ১৯৮০, ১৯৮৩, ১৯৮৫ ও ১৯৮৭ সালে সব মিলিয়ে ১১৩ কোটি ডলারের ঋণ নেয়। এ ছাড়া নব্বইয়ের দশকে একবার, ২০০৩ ও ২০১২ সালে দুবার ও সর্বশেষ গত বছর একবার আইএমএফ থেকে নানা কর্মসূচির আওতায় ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে গত ৫৩ বছরে আইএমএফের সঙ্গে সাড়ে ৭০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করেছে বাংলাদেশ।

অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া রিজার্ভ, ডলারের দাম, রপ্তানি, মূল্যস্ফীতি, মাথাপিছু আয় অর্থনীতির এসব সূচকেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ মার্চ দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৩৩৯ কোটি মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী গত মার্চ মাসে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৯৯৮ কোটি ডলার। দুই দেশে সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে। তারপরও বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানে ডলারে দাম বেশি। বর্তমানে পাকিস্তানে ১ ডলারের দাম দেশটির মুদ্রায় ২৭৯ রুপি। আর বাংলাদেশে ১ ডলারের দাম ১১০ টাকা। দুই দেশেই ডলার প্রবাহের অন্যতম উৎস প্রবাসী ও রপ্তানি আয়। রপ্তানি আয়ের দিক থেকেও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলার রপ্তানি আয় করেছে। অন্যদিকে, গত অর্থবছরের পাকিস্তানের রপ্তানি আয় ছিল ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ডলার। তবে উভয় দেশেই ২০২৩ সালে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ অনেক বেশি। বাংলাদেশে গত ফেব্রম্নয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অন্যদিকে, পাকিস্তানে ওই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ২৩ শতাংশের বেশি। ২০২৪ সালে পাকিস্তানে খাদ্যপণ্য মূল্য তালিকা তুলে ধরছি এখানে। দুধ ১ লিটার ২১১.৮৪ রুপি, পাউরুটি ১টি ৫০০ গ্রাম ১৫৫.৫২ রুপি, চাউল ১ কেজি ৩২৮.৩৬ রুপি, ডিম ১ ডজন ৩১৭.০৮ রুপি, মুরগি ১ কেজি ৭৮৫.৩৮ রুপি, গরুর মাংস ১ কেজি ৯৮৫.৬৮ রুপি, টমেটো ১ কেজি ১২৮.৯৬ রুপি, আলু ১ কেজি ৯৩.০৩ রুপি, পেঁয়াজ ১ কেজি ১১৫.১২ রুপি। মাথাপিছু আয়েও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। ডলারের হিসাবে গত অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার। অন্যদিকে, পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ডলার। পাকিস্তানের তুলনায় আমরা এখন অনেক এগিয়ে রয়েছি এবং ভালো অবস্থায় আছি, এ কথা জোর গলায় বলতে পারি।

রেজাউল করিম খোকন : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে