ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া বিভিন্নভাবে ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো এসব ঘটনার কারণে আর্থিক ক্ষতিসহ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে- যা আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। প্রসঙ্গত বলা দরকার, ব্যাংক ডাকাতির মতো ভয়াবহ ঘটনা কতটা উদ্বেগজনক তা এড়ানোর যাবে না। কেননা, ব্যাংক ডাকাতির মতো ঘটনা বিপজ্জনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। এক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এই ধরনের ঘটনাগুলো আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, এটা আলোচনায় আসছে যে, এক সশস্ত্র সংগঠনের উত্থান এবং দুই বছর ধরে একের পর এক হত্যা-সহিংসতার ঘটনায় যে আতঙ্কের জন্ম হয়েছিল, সেই সশস্ত্রগোষ্ঠীর সঙ্গে 'শান্তি আলোচনা' শুরুর পর তা থেকে মুক্তির আশা জাগতে শুরু করেছিল পাহাড়ের মানুষের মনে। কিন্তু ১৬ ঘণ্টায় বান্দরবানের তিনটি ব্যাংক শাখায় হামলা ও ডাকাতির ঘটনায় উবে গেছে সেই আশা। আবার সেই সংগঠনের নাম ফের আতঙ্ক হয়ে ঘিরে ধরেছে পাহাড়কে। তথ্য মতে, মঙ্গল ও বুধবার দুপুরে বান্দরবানের রুমা এবং থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র লোকজন। তারা টাকা লুট করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে, একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। লুট করে বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলি। এ ক্ষেত্রে এটাও উলেস্নখ করা দরকার, রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা- ডাকাতি এবং ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণের ঘটনাটি মঙ্গলবার রাতে প্রথম ভাগে ঘটলেও; থানচিতে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে হামলা হয়েছে ভরদুপুরে। আর দুটি ঘটনাতেই পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ এর নাম এসেছে; যারা পাহাড়ে 'বম পার্টি' নামে পরিচিত।
আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে এই ঘটনা আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এটাও জানা যাচ্ছে, ঘটনার পর ভয় ছড়িয়ে পড়েছে পার্বত্য তিন জেলার ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জড়িত সবার মধ্যে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে প্রতিটি ব্যাংকই তাদের শাখাকে সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, এই ধরনের ঘটনার ভয়াবহতা এবং আতঙ্কজনক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।
জানা যাচ্ছে, বম পার্টি'র শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংক শাখায় একযোগে হামলা চালায়। ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে তারা মারধর করে। পরে শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এছাড়া হামলাকারীরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের আটটি চাইনিজ রাইফেল, দুইটি এসএমজি এবং ৩৮০টি গুলি লুটে নিয়ে যায়। আনসারদের চারটি শটগান ও ৩৪টি গুলি লুট করে। অন্যদিকে, ১৬ ঘণ্টার মাথায় ৪৭ কিলোমিটার দূরে থানচি উপজেলায় হয় দ্বিতীয় হামলা। বুধবার দুপুরের আগে তিনটি গাড়িতে করে এসে সশস্ত্র লোকজন উপজেলা সদরে কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায়। কৃষি ব্যাংক থেকে দুই লাখ ৮ হাজার টাকা এবং সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা লুট করে নেয় তারা।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। এমনিতে পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায়, ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটে; যেগুলো সামগ্রিকভাবে ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। অন্যদিকে, এর আগেও ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, ঘটেছে ফিল্মি স্টাইলে দিনে দুপুরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা। আমলে নেওয়া দরকার, বর্তমান বাস্তবতায় ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি লুটপাটের ঘটনা কতটা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।