পাঠক মত

ভোলা-বরিশাল সেতুর গুরুত্ব

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

মো. হাসনাইন রিজেন
কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ খ্যাত দ্বীপ জেলা ভোলা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সুফল হিসেবে এ জেলার বিপুল পরিমাণ সম্পদ দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি বিকাশের মেরুদন্ড হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না ভোলা-বরিশাল সেতু না হওয়ার কারণে। এখন পর্যন্ত ভোলা জেলার সঙ্গে কোনো জেলার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়নি। অপর সম্ভাবনাময় এই ভোলা জেলা সঠিক তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারলে হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের সিঙ্গাপুর। এই জেলায় বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। সরকারি এক হিসাব মতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা আসে নদীর ইলিশ, গ্যাস ও পর্যটন শিল্প থেকে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ জেলাই হচ্ছে ভোলা। গবেষক ও বিশ্লেষকরা মনে করেন ভোলা-বরিশাল সেতু তৈরির মাধ্যমে পদ্মা সেতুর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে। ভোলা জেলার প্রাকৃতিক সম্পদ যদি সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট এক পরিবর্তন আসবে। ভোলায় রয়েছে প্রায় দুই ট্রিলিয়ান ঘনফুট গ্যাসের মজুত। বর্তমানে ছয়টি কূপ থেকে প্রতিদিন উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ ১২০ এমএমসিএফ। যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। যাতায়াতের সুবিধা না থাকায় এই বিপুল পরিমাণ গ্যাস থেকে দেশের অর্থনীতিতে তেমন অবদান রাখা যাচ্ছে না। এছাড়া এখানে রয়েছে গ্যাস ভিত্তিক চারটি বিদু্যৎ কেন্দ্র যা থেকে প্রতিদিন ৬৫০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদিত হচ্ছে। আর এই গ্যাস ও বিদু্যৎকে কেন্দ্র করে তৈরি হতে পারে অসংখ্য শিল্প-কারখানা। যার মাধ্যমে কর্মসংস্থান মিলবে অসংখ্য বেকার নারী ও পুরুষের। বেকারত্ব লাঘবের মাধ্যমে যারা অর্থনীতিতে অবদান রাখবেন। কিন্তু যাতায়াতের পর্যাপ্ত সুব্যবস্থা না থাকায় এসব শিল্প-কারখানা গড়ে উঠতে পারতেছে না। স্বর্ণ মুদ্রা হিসেবে খ্যাত সর্বাধিক ইলিশ মাছ আরোহিত হচ্ছে এ জেলা থেকে। বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। জেলেদের জালে ধরা পড়া এই মাছ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজধানীসহ বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করা হয়। রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যাতায়াতের সুবিধা না থাকায় অনেক সময় এ মাছ নিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয় জেলেদের। ভোলা-বরিশাল সেতু থাকলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দিনের মাছ দিনে বিক্রি করতে পারতেন জেলেরা। এখন জেলেরা রাতের বেলা মাছ ধরার পর পরের দিন বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় মাছ রাজধানীতে পোঁছানোর জন্য। এতে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। যার মধ্যে মাছ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। কিন্তু ভোলা- বরিশাল সেতু হলে পদ্মা সেতু ব্যবহারে মধ্যে মাত্র সাত থেকে আট ঘণ্টায় রাজধানীতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এই জেলায় প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকার বেশি তরমুজ উৎপাদন হয়, যা ঢাকাসহ দোশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। যাতায়াতের সুব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা তাদের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তরমুজ পচনশীল একটি পণ্য হওয়ায় ঢাকার অনেক আড়তদার ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিতে চান না। তারা মনে করেন তরমুজ পৌঁছাতে যে সময় লাগে তাতে তরমুজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি। এখানে রয়েছে বস্নাক ডায়মন্ড। এই অমূল্য সম্পদ বস্নাক ডায়মন্ড সংগ্রহের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যার প্রাথমিক মূল্য ধরা হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। জেলার চাহিদা মেটানোর পর সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয় এই জেলায়। যার মূল্য প্রায় হাজার কোটি টাকা। জেলায় উৎপাদিত সবজি (শসা, করলা, রেখা, পেঁপে, ক্যাপসিক্যাম, আলু, ঢঁ্যারস, পেঁয়াজ) জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়। অর্থনৈতিক এমন সমৃদ্ধ জেলা ভোলা মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এই বিচ্ছিন্ন জেলাকে অন্যান্য জেলার সঙ্গে যুক্ত করতে প্রয়োজন ভোলা-বরিশাল সেতু তৈরি। অন্যদিকে দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের ২১ জেলার সহজ যোগাযোগের ক্ষেত্রে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ভোলা জেলা। অপরূপ সৌন্দর্যের এ জেলায় প্রতিদিন আসছেন পর্যটকরা। ক্রমেই বিকশিত হচ্ছে পর্যটন শিল্পের। এখানে শীতকালে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। জীবন্ত ইলিশ তোলার দৃশ্য উপভোগ করা যায় মেঘনার তুলাতলি পাড়ে বসে। চরফ্যাশনের বেতুয়া প্রশান্তির পাড়, কুকরিমুকরি, তারুয়া সৈকত, মনপুরার দক্ষিণা হাওয়া বিচ, শেখ রাসেল পার্ক, লালমোহনের সজিব ওয়াজেদ ডিজিটাল পার্ক, তেঁতুলিয়া নদীর পারে বঙ্গবন্ধু উদ্যান, জ্যাকব টাওয়ার ছাড়া ও রয়েছে অসংখ্য পর্যটনের স্পট। এ পর্যটন স্পটগুলো যোগাযোগের ব্যবস্থা ভালো না হওয়াই দিন দিন জনমানুষ শূন্য হয়ে পড়ছে। পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও যোগাযোগে শতাব্দীর সোপান এ কথা নিশ্চিত। তবে এর সুফল শতভাগ নিশ্চিত হবে ভোলা-বরিশাল ব্রিজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে। তখন মাত্র ৬-৭ ঘণ্টায় ভোলার পণ্য ঢাকায় পৌঁছবে। ভোলা জেলা আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতির বিরাট পরিবর্তন করবে বলে মনে করেন অনেকে। মো. হাসনাইন রিজেন শিক্ষার্থী শম্ভুপুর শাহে আলম মডেল ডিগ্রি কলেজ, তজুমদ্দিন, ভোলা