রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

স্বপ্ন দেখুক প্রতিটি শিশু

সমাজ অনেক সময় শিশুর স্বপ্ন বিকাশে বাধা হয়। সমাজের অনেকেই উৎসাহ না দিয়ে বরং টিটকারি মারে। তারা মনে করে লেখাপড়া করে কী হবে? বরং একটা কাজে লাগলে নগদ আয় হবে। শিশুদের এমন চিন্তা থেকে বের করতে অনেকেই বিদ্যোৎসাহীর ভূমিকা পালন করেন। তাদের অনুপ্রেরণায় শিশুরা সাহস পায় এবং পড়ালেখায় মনোযোগী হয়।
শাহাদাত হোসেন
  ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
স্বপ্ন দেখুক প্রতিটি শিশু

জন্মের পর শিশুর প্রথম কান্না জানিয়ে দেয় পৃথিবীতে তার আগমনের বার্তা। জন্মের পর প্রতিটি শিশুরই রয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট অধিকার। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ঘটতে থাকলে তাকে নিয়ে সবাই স্বপ্ন দেখতে থাকে। শিশুকে নিয়ে স্বপ্ন দিন দিন বড় হতে থাকে। তার প্রতিভার বিকাশ ঘটতে থাকে। মায়ের কোলে তার স্বপ্ন বড় হতে থাকে। এ স্বপ্নযাত্রা কারো আনন্দদায়ক হয় আবার কারো জন্য হয় বেদনার। স্বপ্নের কতটুকু বাস্তবে রুপ নিবে তা নির্ভর করে শিশুর পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর। শিশু যদি স্বপ্ন দেখার নিরাপদ পরিবেশ পায় তবে তার স্বপ্ন বড় হয়। পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি শিশুর স্বপ্নের যত্ন নিতে পারে তবে এ স্বপ্ন টেকসই হয়।

শিশু পরিবারে আদর যত্নে বড় হতে থাকে। বাবার স্নেহ আর মায়ের ভালোবাসায় শিশুর স্বপ্ন বড় হতে থাকে। যদিও সে বুঝতে পারে না তার স্বপ্নের কথা তবুও স্বপ্নটা বড় হতে থাকে। আত্মীয়স্বজন প্রতিটি শিশুকে নিয়ে আনন্দে মেতে থাকে। একটা শিশু জন্মের পর পরিবারের সকলে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। সবার প্রত্যাশা থাকে তাদের শিশু ভবিষতে সম্মানজনক পেশায় পৌঁছবে। কেউ চিন্তা করে তাদের শিশু চিকিৎসক হবে। আবার কারো পরিকল্পনা তাদের শিশু প্রকৌশলী হবে। অন্যদেরও স্বপ্ন থাকে তাদের নিজের শিশুদের নিয়ে। কিন্তু পেশায় যাহোক না কেন সর্বোপরি ভালো মানুষ হতে হবে এমন স্বপ্ন খুব কম জনই দেখেন। তবে এখন অনেকেই এটা মেনে নিয়েছেন একাডেমিক ক্যারিয়ার ভালো হওয়ার সাথে সাথে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে শিশুরা যেন বড় হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের শিক্ষকরা স্বপ্ন দেখেন তার শিক্ষার্থীরা ভালো মানুষ হবে। ভালো মানুষ হয়ে সমাজকে আলোকিত করবে এমন স্বপ্ন তার শিক্ষার্থীদের মাঝে ঢুকিয়ে দেন। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই সম্মানিত শিক্ষকগণ শহর বা গ্রামের প্রতিটি শিশুকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকেন। তাই বিদ্যালয়ে ভর্তির পর শিশু বড় হতে থাকে স্বপ্ন নিয়ে। অন্যদিকে পরিবারের সদস্যরা শিশুর স্বপ্নকে যত্ন করে। শিক্ষকদের সহযোগিতা, পরিবারের যত্ন এবং সমাজের অনুপ্রেরণায় শিশুর স্বপ্ন ধীরে ধীরে বড় হয়। আমাদের শিশুরা অভিযোজনে সক্ষম বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে টিকে থাকার স্বপ্ন দেখে। শিশুদের স্বপ্ন অনেক সময় তার গতিপথ পরিবর্তন করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে। কিন্তু ছোটতেই শিশুরা যেন যোগ্যতা অনুযায়ী পছন্দের নির্দিষ্ট স্বপ্ন দেখতে পারে তার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

শিশুর স্বপ্নকে বড় করতে হলে পারিবারিক পরিবেশ হতে হবে অনুকূল। পরিবারই শিশুর প্রথম পাঠশালা। পারিবারিক শিক্ষা যদি শিশুর স্বপ্ন গড়তে না পারে তবে আমরা আগামীর বাসযোগ্য নিরাপদ ও মানবিক পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ হবো। পরিবারে শিশুরা বড় হয়ে স্বপ্ন দেখবে আদর্শ মানুষ হবার। বড়দের সম্মান, শিক্ষকদের শ্রদ্ধা এবং বাবা-মায়ের সেবার সাথে সাথে শিশুরা তাদের মেধার বিকাশ ঘটাবে। শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের প্রথম স্থান হচ্ছে তার পরিবার। পারিবারিক শিক্ষা শিশুর স্বপ্নকে বিকশিত করবে। অনেক সময় শিশুরা বিপদে পড়ে বা ভয় পায়। তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে সাহস দিতে হবে। তারা অনেক সময় সহজ জিনিস বুঝতে পারে না। এক্ষেত্রে তাদের অপমান না করে বরং প্রশংসাসূচক বাক্যের মাধ্যমে বড় স্বপ্ন দেখাতে হবে। কারণ শিশুর মেধা বিকশিত হবে তার স্বপ্নকে কেন্দ্র করে। অনেক সময় অভিভাবকরা শিশুদেরকে পড়া, খাওয়া বা খেলার জন্য বাধ্য করেন। কিন্তু শিশুর ওপর জোর করে কোন কিছু চাপানো যাবে না। এতে তার ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ে। শিশুকে স্বাধীন চিন্তা ও কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এছাড়াও তাকে স্বাধীনভাবে স্বপ্ন দেখার সুযোগ দিতে হবে।

শিশুর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় বিদ্যালয়ে। আমাদের দেশে বেশির ভাগ শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি হলে লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। বর্তমানে আমাদের দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুবই সাজানো এবং পরিপাটি। সব শ্রেণিতে পাঠদানের আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। বিশেষ করে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে শিশুদের জন্য বিভিন্ন খেলনা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি রাখা হয়েছে। শিশুরা যেন পড়ায় আকৃষ্ট হয়ে নিজেকে গড়তে স্বপ্ন দেখতে পারে এমন সব ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। বিদ্যালয়ে শিশুর বিকাশকে ত্বরান্বিত করার জন্য শিক্ষকদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। আর্থিক সচ্ছলতার কথা বিবেচনায় রেখে শিশুদের জন্য উপবৃত্তি ও স্কুল ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করেছে সরকার। লক্ষ্য একটাই শিশুরা স্বপ্ন দেখার পরিবেশ পাবে। শিশুর লালিত স্বপ্ন একদিন বড় হবে। আলোকিত করবে আমাদের এই পৃথিবী।

সমাজ অনেক সময় শিশুর স্বপ্ন বিকাশে বাধা হয়। সমাজের অনেকেই উৎসাহ না দিয়ে বরং টিটকারি মারে। তারা মনে করে লেখাপড়া করে কী হবে? বরং একটা কাজে লাগলে নগদ আয় হবে। শিশুদের এমন চিন্তা থেকে বের করতে অনেকেই বিদ্যোৎসাহীর ভূমিকা পালন করেন। তাদের অনুপ্রেরণায় শিশুরা সাহস পায় এবং পড়ালেখায় মনোযোগী হয়।

সমাজের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী বা বিদ্যোৎসাহী স্বেচ্ছায় বিভিন্ন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে শিশুদের মেধা ও মননশীলতার বিকাশে সহায়তা করেন। শিশুদের জন্য বিভিন্ন দিবসে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে শিশুদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মানসিকতা তৈরি হয়। নিজেদের যোগ্যতা ও মেধা প্রকাশের এক অনন্য মাধ্যম হচ্ছো প্রতিযোগিতা। শিশুরা ক্রীড়া, শিল্পকলা, সাহিত্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথেও এগিয়ে যায়।

প্রতিটি শিশুই স্বাধীন। পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিশুর পড়ালেখার অধিকার রয়েছে। পড়ালেখা করে সে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। শিশুকে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়তে সরকার সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিশুরা সরকারি সব সুবিধা পেলেই কেবল স্মার্ট নাগরিক হতে পারবে না। এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শিশুরা উৎসাহ বা প্রশংসা পেলে যেকোনো কাজে আগ্রহী হয়। আর এগুলো শিশুদের আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে সহায়তা করে। তাই আমরা এমন পরিবেশ তৈরি করব যেন প্রতিটি শিশুই স্বাধীনভাবে স্বপ্ন দেখতে পারে। শিশুরা স্বপ্ন দেখে আগামীর নিরাপদ পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে আসুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শাহাদাত হোসেন : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে