অটিজমে আক্রান্ত শিশু কার্যকর পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সঙ্গত কারণেই অটিজমে আক্রান্ত শিশুসংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, দেশে প্রতি ৫৮৯ জন শিশুর মধ্যে ১ জন অটিজমে আক্রান্ত। অর্থাৎ প্রতি ১০ হাজারে ১৭ জন শিশু অটিজমে আক্রান্ত। অন্যদিকে, মেয়ে শিশুর তুলনায় ছেলে আড়াইগুণ বেশি আক্রান্ত হয়। এ সংখ্যা গ্রামে ৭১ এবং শহরের ২৯ শতাংশ।
তথ্য মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজমের (ইপনা) উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ওই জরিপটি দেশের আট বিভাগের ৩০ জেলায় ৩৭ হাজার ৯৪২ বাড়িতে গিয়ে ১৬ থেকে ৩০ মাস বয়সি ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮ জন শিশুর ওপর পরিচালিত হয়। প্রসঙ্গত এমন বাস্তবতায় বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও গতকাল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত হয়েছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় 'সচেতনতা-স্বীকৃতি-মূল্যায়ন : শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা'।
আমরা বলতে চাই, অজিটম আক্রান্ত শিশুদের সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে সর্বশেষ জরিপে (এনএসপিডি) দেখা গেছে, দেশে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষের কোনো না কোনো প্রতিবন্ধিতা আছে। এর মধ্যে অটিজম আক্রান্ত শিশু আছে ৭৪ হাজারের ওপরে। এমনকি প্রতিবন্ধীদের মধ্যে শূন্য থেকে চার বছর বয়সি শিশুদের ২৪ শতাংশ এবং পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের ৪৩ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা পায় না। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ার বিষয়টি এড়ানো যাবে না। কেননা, জানা যায় 'অটিজমে আক্রান্ত প্রকৃত শিশুর সংখ্যা বলা খুবই কঠিন। কারণ একটা শিশুর মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখা গেলে অভিভাবক শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে গেল, চিকিৎসক অটিজম লিখে দিল বিষয়টা এমন না। কারণ এদের অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে।' অন্যদিকে, এটাও সামনে এসেছে যে, 'অটিজমে আক্রান্তদের কোনো চিকিৎসা নেই। তাদের সঠিক ব্যবস্থাপনা দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়।'
আমরা মনে করি, সঠিক ব্যবস্থাপনা দিয়ে চিকিৎসা সেবার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহাকারে আমলে নিতে হবে। এছাড়া জানা যায়, অটিজমে আক্রান্ত শহরে বেশি- এর কারণ, গ্রামের সচ্ছল পরিবারে কারও সন্তানের অটিজমের লক্ষণ থাকলে তারা শিশুটিকে নিয়ে শহরে শিফট করে। পরবর্তীকালে যখন কোনো অটিজম শনাক্ত হয় তখন সেটা শহরের রোগী হিসেবে পরিগণিত হয়। সেভাবেই শহরের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। আমরা কলতে চাই, অটিজমে আক্রান্ত হওয়া এবং সঠিক ব্যবস্থাপনাসহ চিকিৎসা সেবার বিষয়টি আমলে নিয়ে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
এটাও আমলে নেওয়া দরকার যে, অটিজম কেন হয়? এ প্রসঙ্গে আলোচনায় এসেছে যে, গর্ভকালীন সময় মায়ের হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, জ্বর এবং সঙ্গের্ যাশ হলে, শারীরিক ও মানসিক সমস্যা থাকলে শিশু অটিজমের শিকার হতে পারে। বাবা-মায়ের বয়স ৪০ বছরের বেশি হলে। এমনকি পরিবেশগত কারণে শিশু অটিজমের শিকার হতে পারে। তবে এটাও জানা যায়, এটি কোনো রোগ নয়, জন্মগত স্নায়ুবিক দুর্বলতা। শিশুর জন্মের ২-৩ বছর বয়সের মধ্যে এটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। ফলে এই বিষয়গুলো যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি এটাও জানা দরকার- অটিজমের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্পিচথেরাপি, কাউন্সিলিংসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়ে এবং এতে অনেকে সুস্থ হয়ে উঠছে বলেও জানা যাচ্ছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশে প্রতি ৫৮৯ জন শিশুর মধ্যে ১ জন অটিজমে আক্রান্ত। অর্থাৎ প্রতি ১০ হাজারে ১৭ জন শিশু অটিজমে আক্রান্ত- এটি আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।