ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশরা আমলাতন্ত্রের জন্ম দিয়েছিলেন, কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। তারা চেয়েছিল উপমহাদেশে এমন এক এলিট শ্রেণি তৈরি করতে- যারা দেখতে ভারতীয় কিন্তু মগজে ব্রিটিশ। মূলত ব্রিটিশদের শাসন, শোষণ ও স্বার্থ রক্ষা করা ছিল তাদের দায়িত্ব। তাদের সেভাবেই ট্রেনিং দিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হতো। দুইশ' বছরের ব্রিটিশ শাসনের শেষ একশ' বছরে ইংরেজদের মানুষ প্রচন্ড ঘৃণা করতে শুরু করে। তাই তাদের দিয়েই ট্যাক্স তোলা সহজ হতো। ফলে প্রশাসনের বড় পদগুলো যেমন সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব লেভেলের পদগুলোতে ইংরেজরা নিজেরাই কাজ করতো আর ছোট পদগুলোতে ছিল ভারতীয় চেহারার ব্রিটিশ মগজের অফিসারগুলো। এসব ভারতীয় আমলারাই মাঠ প্রশাসনে কাজ করত। ব্রিটিশরা আমলাতন্ত্র যত আইন-কানুন নিয়ম-নীতি তৈরি করেছে, তার প্রায় সবই সাধারণ জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে। শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ অবাক হয়ে দেখল, সদ্য ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হওয়া পাকিস্তানও ব্রিটিশ আমলাদের তৈরি আইন-কানুন নিয়ম-নীতির তেমন কোনো উলেস্নখযোগ্য পরিবর্তন করেনি। দমনমূলক আইন বা কালাকানুনগুলোর তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। মানুষ তাই শত বছরের পুরনো এ আমলাতন্ত্রের ওপর আস্থা হারিয়েছে।
আধুনিককালে সিভিল সার্ভেন্টদের দ্বারা পরিচালিত প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আমলাতন্ত্র বলে। আমলাতন্ত্র হলো প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত এমন একটি সংগঠন যেখানে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ পরস্পরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে প্রশাসনিক কার্যাবলি সম্পন্ন করে। অন্যভাবে বলা যায় যে, আমলাতন্ত্র হলো এমন এক প্রশাসন ব্যবস্থা- যেখানে একদল দক্ষ পেশাজীবী সরকারি কর্মচারী সুবিন্যস্ত সাংগঠনিক নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কার্যাবলি সম্পাদন করেন। প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আমাদের আমলাতন্ত্রে কতটা সুসংহত, সুবিন্যস্ত করা হয় তা বিবেচ্য বিষয়। আমলাতন্ত্রকে দক্ষ প্রশাসকের পরিণত করতে, কার্যকরী পদক্ষেপ এ যাবত গৃহীত হয়েছে তা সূক্ষ্ণভাবে বিচার করার সময় এসেছে। আমলাতন্ত্রে পেশাদারিত্বের প্রতি জোর দেওয়া হয়ে থাকে। আমাদের আমলাতন্ত্র কতটা সবল পেশাদারিত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত তা একবার আমাদের নীতি-নির্ধারক মহল ভেবে দেখেছেন কি? আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে অনিয়ন্ত্রিত আমলাতন্ত্রে আধুনিকতার অনেক ফাটল বা ত্রম্নটি পরিলক্ষিত হয়। যেমন আমলারা নিজেদের পদমর্যাদার ব্যাপারে অতিমাত্রায় সচেতন থেকে নিজেদের প্রভু, ক্ষমতাবান হিসেবে দাবি করে থাকেন। নাগরিকদের প্রতি উদাসীনতা ও উষ্মা প্রদর্শন করে থাকে। এ ছাড়া বর্তমানকালের আমলারা মানসিকতায় আরও যা যা পরিলক্ষিত হয় তা হচ্ছে- সৃজনশীলতার অভাব, দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, বেদবাক্য হিসেবে গ্রহণ, জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, আনুষ্ঠানিকতার বাড়াবাড়ি, দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা, ক্ষমতা লিপ্সা, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি নির্লিপ্ততা, অভিভাবকসুলভ আচরণ, নিরপেক্ষহীনতা, জনগণের প্রতি অসহযোগিতা, রাজনৈতিক উন্নয়ন ও বিকাশে আমলারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং কখনো কখনো উসকানিমূলক ভূমিকার কারণে আধুনিক সেবা প্রদান থেকে আমলারা দূরে সরে যাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
সরকারের উদ্দেশ্য হবে আমলাদের মাধ্যমে ব্যাপক জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধন করা। কিন্তু সমস্যা হলো, সরকারি কর্মচারীরা ব্যাপক জনগণের নাম ভাঙিয়ে বিশেষ গোষ্ঠী, শ্রেণি বা বিশেষ ধরনের তল্পিবাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হয়- যা ঔপনিবেশিক আমলের রীতি-নীতির নামান্তর। ঔপনিবেশিক আমলে আমলাদের সেবকের পরিবর্তে শাসন পরিচালনার অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত করে তাদের মগজকে ধোলাই করা হতো। অর্থাৎ এমন বিশেষ প্রশিক্ষণ ও সংস্কৃতিতে আবদ্ধ করা হতো- যার ফলে আমলারা শুধুই তল্পিবাহক, পোষাপ্রাণী, তোষামোদি বাহক ও এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আমাদের বর্তমান সরকারি চাকরিজীবীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত হয়ে খাপ খাওয়াতে কি চেষ্টা করেন বা পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলাতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। করতে চাইলেও কোথা থেকে যেন মানসিক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। বর্তমানে দলীয় রাজনীতির প্রভাবে প্রকাশ্যে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দিতে সরকারি কর্মচারীরা উৎসাহবোধ করছেন। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে- যা সরকারি কর্মচারী সমাজের ঐক্য, পারস্পরিক আস্থা, সহমর্মিতা ও মর্যাদাবোধকে ক্ষুণ্ন করছে। যেমন আজকাল কোনো কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী অতি উৎসাহী হয়ে আচরণগত সমস্যার কারণে একে অন্যকে দোষারোপ করা, নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করা, কুৎসা, মিথ্যাচার রটানো, অযথা খোঁচা দিয়ে একটু বিষোদ্গার করা। এ যেন একটা নিয়মের বিষয় হিসেবে পরিণত হয়ে গেছে। এই জাতীয় প্রবণতার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অনৈক্য, ভুল বোঝাবুঝি এবং দূরত্ব সৃষ্টি হয়- যা জাতীয় ঐক্য সংহতিকে বিনষ্ট করতে পারে।
সরকারের প্রশাসনিক কাজকর্ম সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। সরকারি কর্মচারীদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখে সাধারণ মানুষের সেবা করা। সরকারি কর্মচারীরা সেবক-সেবিকার মনোবৃত্তিতে জনগণ ও জাতিকে সেবা দেওয়া আজ জনগণের অপরিহার্য দাবি। যে কয়েকটি বিষয়কে মাথায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হয় তা আজ সবারই জানা। কিন্তু এ সব বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কতটা অঙ্গীকারাবদ্ধ তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। আজকের এই লেখার শুরুতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ইঙ্গিত ও আলোকপাত করতে চাই। প্রথমেই যে জিনিসটির প্রতি আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা হচ্ছে অফিসের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা। এই নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার বিষয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সচেতনতা আবশ্যক। কিন্তু যদি অফিসের নথি হারিয়ে যায়, তাহলে অফিসের নিরাপত্তার মান কতটুকু অটুট বা সাবলীল থাকে তা আমাদের ভাবায়। আজকাল মাঝে-মধ্যেই বিভিন্ন অফিস থেকে বিভিন্ন সংখ্যক ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। এগুলোতে কতটা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় আছে তা আমাদের যথার্থই আতঙ্কিত করে তুলছে। সাধারণ জনগণ প্রশাসনের উঁচুস্তর বা গুরুতপূর্ণ পদধারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে কতটা কল্যাণমুখী সেবা পাচ্ছেন- সেটা আমাদের খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। শোনা যাচ্ছে যে, এসব পদধারী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্তা ব্যক্তিরা ব্যক্তি বিশেষ ও স্বার্থানেষী মানুষের বিভিন্ন চাপ সৃষ্টির মুখে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালীদের ব্যবহৃত মেশিনে পরিণত হয়ে থাকে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা বিভিন্ন সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিরা সাধারণ জনগণকে কোনো রকম পাত্তাই দিতে চান না। তারা সাধারণ জনগণের ধরাছোঁয়ার বাইরে আড়ালে আবডালে থেকে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের দিকেই মনোযোগ দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ চাপ সৃষ্টিকারী মহল বা স্বার্থানেষী গোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দিকে নজর দিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে অনেকের ব্যক্তি স্বার্থই চরিতার্থতা লাভ করে থাকে। এদের মধ্যে একটা শ্রেণি আছে যারা কোনো কিছুতে জড়িত না হয়ে কোনো রকম সময় কাটাতে পারলেই স্বস্তি অনুভব করেন।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও চিত্রটি কেমন সেদিকে নজর দেওয়া হলো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিস্থিতি ভালো নয়, নিম্নমুখী। এ আলোচনায় কিছু নেতিবাচক চিত্র ও অভিজ্ঞতার কথা এখানে সংযোজিত হলো। বর্ণিত বিষয়ে কিছু চেনা মুখকে এনে প্রশাসনকে বিকারগ্রস্ত করা হচ্ছে। অযোগ্য লোককে জায়গা করে দিয়ে তার দাপট বাড়ানো হচ্ছে। দক্ষতা ও যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, সর্বোপরি আস্থা ও নির্ভরশীলতাকে নষ্ট করে দিয়ে ত্রাসের পরিবেশে সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করা হচ্ছে আর অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রশয় দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারের অধীনে বিভিন্ন সচিবের বা বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের একটি প্রসঙ্গ এখানে খানিকটা তুলে ধরা হলো। পর্যবেক্ষক মহলের দাবি, সরকারের তোষণ নীতি ও ধামাধরা এক শ্রেণির সচিব ও কর্মকর্তা দফায় দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও পুনঃনিয়োগ পাচ্ছেন। সে সচিব/বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা সরকারি ও জনস্বার্থ বিষয়ে কতটা বিশেষজ্ঞ সেটা কিন্তু সাধারণ জনগণের অগোচরেই থাকছে এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সে সচিবরা কি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন সে প্রশ্ন জনগণের। তবে দফায় দফায় এ ধরনের নিয়োগ যে উদ্দেশ্যমূলক সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। দফায় দফায় এহেন নিয়োগের মাধ্যমে একজন অযোগ্য ও অদক্ষ লোককে ক্ষমতায়ন ও পদায়ন করে কোনো বিশেষ সেক্টরের কি বিশেষ উন্নয়ন ঘটাবেন তা কিন্তু পরিষ্কার নয়। যোগ্যতা ও দক্ষতা নির্বিশেষে ব্যক্তি বিশেষের পছন্দ অপছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকতাকে নষ্ট করার মধ্যে কোনো বাহাদুরি বা কৃতিত্ব নেই। পরোক্ষভাবে স্বার্থপর ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, নিয়োগ ও পুনঃনিয়োগের মাধ্যমে বিগত দিনে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নষ্ট হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা মিডিয়াতে এসেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে মিডিয়ার মুখও বন্ধ রাখা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের প্রণীত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। দুর্নীতি দমন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- 'উন্নয়ন কর্মকান্ড'। উন্নয়ন কর্মকান্ড বেশি হওয়া মানে বেশি অর্থের লেনদেন। যেখানে যত বেশি টাকা পয়সা খরচ হয়, সেখানে দুর্নীতির সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। সেজন্য উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় অগ্রসরমান বাংলাদেশের জন্য এ মুহূর্তে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো দুর্নীতি। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গত এক যুগে প্রণয়ন করা হয়েছে বিভিন্ন আইনকানুন, নিয়মনীতি, পরিকল্পনা এবং কৌশল। সেগুলো বাস্তবায়নও অব্যাহত আছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ্ধতিগত সংস্কার, তাদের কৃত্য, কৃতি ও দক্ষতার উন্নয়ন এবং সর্বোপরি একটি সমন্বিত ও সংঘবদ্ধ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে শুদ্ধাচারকে একটি আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কি থেমে আছে দুর্নীতি? আইন প্রয়োগ করে দুর্নীতি বিস্তৃতির রাশ কিছুটা টেনে ধরা গেলেও সামগ্রিকভাবে দুর্নীতিকে রুখে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি বন্ধ হওয়া দরকার। দরকার মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরা। কারণ, প্রশাসনিক ক্ষমতার ছত্রছায়ায় এবং কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দুর্নীতিবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ক্ষমতার প্রভাব বন্ধ করতে হলে প্রশাসনের আমূল সংস্কার প্রয়োজন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুরই পরিবর্তন দরকার হয়। আমলাদের স্বার্থপরতা আর তোষণনীতি সরকারের নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নষ্ট করছে। অধিকন্তু প্রশাসনিক ও নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহার দুর্নীতির অন্যতম কারণ। তাই আসুন, সব সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করি।
আমাদের আমলাতন্ত্র কতটা সবল পেশাদারিত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত? প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কতটা সেবক ও কতটা প্রভু? আমলানির্ভর সরকার রাষ্ট্রের উন্নয়নে কতটা সহায়ক বা প্রতিবন্ধক? এ প্রশ্নগুলো জনগণকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বিদ্যমান আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আমলাতান্ত্রিক দৌরাত্ম্য অভিধায়ে আখ্যায়িত করা যায়। বিদ্যমান আমলাতন্ত্রে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতায় রাষ্ট্রের রাজনীতি শূন্যতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমলাদের স্বার্থপরতা আর তোষণনীতিতে সরকারের নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নষ্ট হচ্ছে। বিচার বিভাগের ওপর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের কারণে বিচার বিভাগ পর্যন্ত আজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আমলারা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে অপব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে, মন্ত্রী-এমপি পর্যন্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে অনেক সময় নতজানু নীতি অবলম্বন করে থাকে অথবা ভাগাভাগি চুক্তির মাধ্যমে সুবিধাভোগীর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এতে সাধারণ মানুষ আমলাদের দ্বারা বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকারে পরিণত হন। পরিশেষে বলতে পারি যে, আমলা ও মন্ত্রীদের ওপর নজরদারি ছাড়া প্রশাসন ও উন্নয়ন থমকে যাবে। তাই সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে আমাদের আমলাতন্ত্রের আশু সংস্কারে মনোযোগ নিবদ্ধ হতে হবে। অধিকন্তু মন্ত্রী ও আমলাদের কার্যক্রম বিষয়ে বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা নিশ্চিত করে জাতিকে দুর্যোগ ও আশঙ্কা মুক্ত করতে হবে। অন্যথায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বারিত হবে।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ : সাবেক উপমহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি; কলামিস্ট ও গবেষক