নানা সময়ে বাড়তি ভাড়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে বাড়তি ভাড়ার অভিযোগও নতুন নয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, ঈদ উপলক্ষে এবারও সড়ক পথে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আমরা মনে করি, বাড়তি ভাড়ার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। খবরে উঠে এসেছে যে, বাড়তি ভাড়া নিতে এবারে কৌশল বদলেছেন বাস ও পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। যদিও বাড়তি ভাড়া নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পুলিশের আইজিপি। কিন্তু বাস্তবে নিয়মিত ভাড়ার তুলনায় ১শ' থেকে ৩শ' টাকা বাড়তি নেওয়ার পাশাপাশি যাত্রীদের বাধ্য করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রুটের শেষ গন্তব্যের টিকিটের মূল্য পরিশোধে- এমনটিও জানা যাচ্ছে। আর এতে কোনো কোনো রুটে যাত্রীকে ৫শ' টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিন। মানুষ ঈদ আনন্দকে ভাগাভাগি করতে প্রিয়জনদের কাছে ছুটে যায়। কিন্তু যদি যাত্রাপথে বাড়তি ভাড়া গুণতে হয় বা নানা ধরনের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়, কিংবা যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি অর্থ আদায়ের ঘটনা ঘটে, তবে তা অত্যন্ত পরিতাপের এবং উদ্বেগজনক। সঙ্গত কারণেই সর্বাত্মক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
এটাও বলা দরকার, ঈদে পরিবহণে বাড়তি ভাড়া আদায় করলে বাস বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি। তিনি বলেছিলেন, অনেক পরিবহণই ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। যেসব বাস কোম্পানি সুনামের সঙ্গে কাজ করছে তাদের কোনো বাস যদি ভাড়া বেশি নেয় তাহলে ব্যবস্থা নেবেন। প্রয়োজনে স্পটে উপস্থিত হওয়ার কথাও জানান। এছাড়া কোন কোন জায়গায় কারা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে, তা শনাক্ত করা এবং ওই গণপরিবহণের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু খবরে উঠে এসেছে যে, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রকাশ্যে বাসের আগাম টিকিটে ভাড়তি ভাড়ার পাশাপাশি নতুন কৌশলে যাত্রীদের পকেট কাটা হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ বিষয়ে যাত্রীরা কোনো অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া যেন গুনতে না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এছাড়া প্রসঙ্গত বলা দরকার, ঈদ যাত্রায় নানা ধরনের ভোগান্তির বিষয় আলোচনায় আসে। এবারেও জানা যাচ্ছে, আসন্ন ঈদযাত্রায় বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছেন চালক-যাত্রীরা। এতে ঈদের ছুটিতে মহাসড়কের সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকায় দুর্ভাবনার কারণ হতে পারে যানজট। মহাসড়কে সেতুর পূর্বপ্রান্তে প্রায় ৮ কিলোমিটার সিঙ্গেল রোড ও যাত্রাপথে এ অবস্থায় আসন্ন ঈদযাত্রা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবহণ চালক ও যাত্রীরা। আমলে নেওয়া দরকার, সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের মতে, ঈদের সময় নানা কারণে মহাসড়কে যানজট হয়। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অন্যতম। প্রধানত যাত্রীর চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় ট্রিপ বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ট্রিপ দিতে গিয়ে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ চালক, টানা দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর কারণে চালকের শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি-অবসাদ এবং যানবাহন বৃদ্ধি, সড়কে ত্রম্নটিযুক্ত লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা রং করা যানবাহন ও অসচেতন যাত্রীদের তাড়াহুড়ো- মূলত এসব কারণেই ঈদে মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। ফলে সামগ্রিকভাবে এই বিষয়গুলোও আমলে নিতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ঈদযাত্রায় যেন যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনতে না হয় সেটি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করুন। একইসঙ্গে যানজট থেকে শুরু করে যাত্রাপথের ভোগান্তি দূর করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।