বিনিয়োগের বাধা
যথাযথ উদ্যোগ নিন
প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের প্রশ্নে বিনিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে বিনিয়োগ বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা যেমন জরুরি- তেমনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বা বাধাসংক্রান্ত বিষয়ও আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে বিনিয়োগে বাধা হিসেবে ঘুষ, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতাকে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তথ্যমতে, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর) প্রকাশিত ২০২৪ সালের বৈদেশিক বাণিজ্যে বাধাবিষয়ক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। একইসঙ্গে ঘুষ ও দুর্নীতিকে বাংলাদেশের অনেক পুরানো সমস্যা হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে সেই মার্কিনি প্রতিবেদনে।
আমরা মনে করি, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের বাধা বা প্রতিবন্ধকতার বিষয় সামনে এলে তা গুরুত্ব সহকারে আমলে নিতে হবে। এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। কেননা, দেশকে এগিয়ে নিতে তথা সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্নে বিনিয়োগের বিষয়টি ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে; ফলে, বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা দূর করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।
উলেস্নখ্য, মার্কিনি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতিবিরোধী আইনের প্রয়োগও যথেষ্ট নয়। বাণিজ্যিক সমঝোতাগুলোর ক্ষেত্রে ঘুষ ও চাঁদা দেওয়ার অভিযোগ প্রচুর। অর্থপাচারের অভিযোগও আছে। এক্ষেত্রে এটাও বিবেচনা নেওয়া দরকার, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় ইলেকট্রনিক প্রকিউরমেন্ট পোর্টাল চালু করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদাররা বিভিন্ন দরপত্রে প্রত্যাশিত পণ্যের পুরনো কারিগরি মান নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারিগরি মান পছন্দের দরদাতাদের কাজ দেওয়ার উদ্দেশ্যে নির্ধারণ করা হয় কিনা, তা নিয়ে মার্কিন অংশীদারদের সন্দেহ আছে। অন্যদিকে, সরকারি দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতি আছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। নানা ধরনের বিষয় মার্কিন প্রতিবদেন উঠে এসেছে- যেখানে কয়েকটি মার্কিন কোম্পানি দাবি করেছে, বাংলাদেশে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীরা ক্রয়প্রক্রিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির দরপত্র ঠেকাতে বাংলাদেশি অংশীদারদের ব্যবহার করেছে। এছাড়া নিলামে ক্রয়প্রক্রিয়ায় দরপত্র বাছাইয়ে কারচুপির বিষয়েও অভিযোগ করেছে।
আমরা মনে করি, যে বিষয়গুলো প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তা পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টদের করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, বিনিয়োগে যে কোনো ধরনের বাধা বা প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা দূর করা জরুরি। মার্কিন প্রতিবেদনে এটাও উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশ এখনো 'কাস্টমস ভ্যালুয়েশন লেজিসলেশন' সম্পর্কে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাকে (ডাবিস্নউটিও) অবহিত করেনি। এছাড়া মেধাসম্পদ সুরক্ষায় বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্যোগ নিলেও এর কার্যকর প্রয়োগ নিয়ে নিশ্চিত নয় যুক্তরাষ্ট্র- এমনটিও উঠে এসেছে।
অন্যদিকে, এটাও লক্ষণীয়, বাংলাদেশে নকল পণ্য সহজলভ্যতাকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে মার্কিনি প্রতিবেদনে। যেখানে মার্কিনি অংশীদারদের অভিযোগ- ভোগ্য পণ্য, পোশাক, ওষুধ ও সফটওয়্যার খাতের পণ্যগুলো বাংলাদেশে নকল হচ্ছে। বাংলাদেশে ডিজিটাল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বিভিন্ন আইন নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। উঠে এসেছে, বাংলাদেশ থেকে রেমিট্যান্স বিদেশে পাঠাতে আইনি জটিলতার কথাও। অন্যদিকে, শ্রম ইসু্যতে উদ্বেগের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করে। এটি এখনো বহাল রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বিনিয়োগ বাড়লে তা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করে। এছাড়া কর্মসংস্থানের প্রশ্নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। ফলে বিনিয়োগে বাধাসংক্রান্ত যে বিষয়গুলো মার্কিনি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হবে এবং যে কোনো ধরনের জটিলতা থাকলে তার সমাধানে কাজ করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।