আবারও রিজার্ভ কমেছে। এক্ষেত্রে বলা দরকার, এর আগেও এটা আলোচনায় এসেছিল যে, ধারাবাহিকভাবে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ফলে এখন যখন রিজার্ভ কমার বিষয়টি সামনে এলো, তখন তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক। যা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা।
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে দেশে চলছে ডলার সংকট। নানা উদ্যোগ নিয়েও এ সমস্যার যেন সমাধান হচ্ছে না। যে হারে আমদানির দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে সেই হারে রেমিট্যান্স-রপ্তানি আয় আসছে না। ফলে আমদানির চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় বাজারে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৩৪ কোটি মার্কিন ডলার। ২৭ মার্চ এ রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৪৮১ কোটি ডলারে। বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ নেমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৪৫ কোটি ডলারে। যা ৬ মার্চ ছিল ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ ২১ দিনে গ্রোস রিজার্ভ কমেছে ১৫২ কোটি ডলার (১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন) এবং বিপিএম-৬ কমেছে ১৬৯ কোটি ডলার (১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন)। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে গ্রোস রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। তবে বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে- যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। আর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
আমরা বলতে চাই, এটা যখন আলোচনায় আসছে যে, প্রতি মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে কষ্টসাধ্য হবে বাংলাদেশের জন্য- তখন সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। কেননা, সাধারণত একটি দেশের নূ্যনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদন্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে বলে খবরে উঠে এসেছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এছাড়া এটাও বলা দরকার, এর আগে যেমন রিজার্ভ কমার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বাড়ছে উদ্বেগ- এমন বিষয়ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছিল। ফলে রিজার্ভ কমার বিষয়টিকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
উলেস্নখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সংকটের কারণে রিজার্ভ থেকে বাজারে প্রচুর ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া এ মাসে আকুর বিলও পরিশোধ হয়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কম এসব কারণেই মূলত রিজার্ভ কমছে। এটাও বলা দরকার, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি থাকায় আমদানি ব্যয় কমেনি। এছাড়া করোনার পর বৈশ্বিক বাণিজ্য আগের অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে- যা এখনো অব্যাহত আছে। অন্যদিকে, এ সংকট দিন দিন বাড়ছে। বাজারে 'স্থিতিশীলতা' আনতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ধারাবাহিকভাবে কমছে অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এ সূচকটি। এছাড়া লক্ষণীয়, এর আগে এটাও আলোচনায় এসেছে যে, রিজার্ভ ধরে রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও ঘাটতি কমছে না। অন্যদিকে, রিজার্ভ কমে যাওয়াটা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর না এটাও বারবার সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, সর্বাত্মক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, রিজার্ভ কমছে এই বিষয়টিকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। রিজার্ভ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং অর্থনীতিবিদরা যে বিষয়গুলো বলছেন, সেগুলোকে বিবেচনায় রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। রিজার্ভ সংক্রান্ত যে বিষয় সামনে আসছে তা বিবেচনায় নেওয়ার পাশাপাশি করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে পদক্ষেপে গ্রহণ ও এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।