সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

খাবার অপচয় কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

  ৩০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
খাবার অপচয় কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

বিশ্বে খাদ্য অপচয় এক বড় ধরনের সংকট। বলা দরকার, কোটি কোটি মানুষ যখন না খেয়ে আছে, অন্যদিকে লাখ কোটি ডলার মূল্যের খাবার ময়লার ঝুড়িতে ফেলা হচ্ছে! ফলে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের তা আমলে নেওয়া জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠেছে, খাবার অপচয় শুধু সংকটই নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি। মনে রাখা দরকার, খাদ্য অপচয়ের প্রভাব পরিবেশগত ও অর্থনৈতিকই শুধু নয়, খাদ্য অপচয়ের কারণে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাবও বিদ্যমান। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই।

তথ্য মতে, বিশ্বজুড়ে ২০২২ সালে প্রতিদিন ১০০ কোটি টনের বেশি খাবার নষ্ট হয়েছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো বেশির ভাগ খাবার অপচয় হয়েছে বাসাবাড়িতে। প্রসঙ্গত, বুধবার জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। সেখানে খাবার অপচয়ের এ ঘটনাকে উলেস্নখ করা হয়েছে 'বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি' হিসেবে। আমরা মনে করি, বৈশ্বিক এই ট্র্যাজেডির বিষয়টি সহজ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বরং তা আমলে নিয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব এবং সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হওয়া জরুরি। একইসঙ্গে মানুষকে সচেতন করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।

বলা দরকার, জাতিসংঘের ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি মানুষ যখন না খেয়ে আছে, তখন লাখ কোটি ডলার মূল্যের খাবার ময়লার ঝুড়িতে ফেলা হচ্ছে। লক্ষণীয় যে, ২০২২ সালে দিনে ১০০ কোটি টনের বেশি খাবার অপচয় হয়েছে, যা বিশ্ববাজারে আসা উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। যখন এটি আলোচনায় এসেছে যে, এ ধরনের অপচয়ের ঘটনা নৈতিক নয়; বরং 'পরিবেশগত ব্যর্থতা'। তখন তা যেমন এড়ানো যাবে না; তেমনিভাবে লক্ষ করা দরকার, উড়োজাহাজ চলাচল থেকে নিঃসরিত কার্বন যতটা না বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়াচ্ছে, এর থেকে পাঁচ গুণ উষ্ণতা বাড়াচ্ছে খাদ্যবর্জ্য।

আমরা বলতে চাই, এখন পর্যন্ত বিশ্বে খাবারের অপচয় নিয়ে জাতিসংঘের সংকলিত দ্বিতীয় প্রতিবেদন এটি। প্রতিবেদনটি তৈরিতে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করেছে অলাভজনক সংস্থা ডবিস্নউআরএপি। এছাড়া খাবার অপচয় নিয়ে এটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ চিত্র উপস্থাপন করেছে। ফলে চিত্র আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। একইসঙ্গে এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বাংলাদেশে সংশ্লিষ্টদেরও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কেননা এর আগে জানা গিয়েছিল, বাংলাদেশে প্রতি বছর যত খাবার উৎপাদন হয়, তারও একটি বড় অংশ ভাগাড়ে যায়, মানে নষ্ট হয়। জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ইউনেপ ২০২১ সালে ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স নামে রিপোর্ট প্রকাশ করে- যেখানে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে বছরে এক কোটি ৬ লাখ টন খাদ্য অপচয় হয়। ফলে দেশের সংশ্লিষ্টদের খাদ্য অপচয় সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উদ্যোগী হতে হবে।

প্রসঙ্গত, বলা দরকার, এটাও আলোচনায় এসেছে যে, প্রতি বছর দিনে এক বেলায় যত খাবার নষ্ট হয়, শুধু তা দিয়েই বর্তমানে অনাহারে থাকা প্রায় ৮০ কোটি মানুষের সবাইকে খাওয়ানো সম্ভব। সঙ্গত কারণেই খাদ্য অপচয় সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নেওয়া কতটা জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল যে, উৎপাদন থেকে খুচরা বাজারে বিক্রির মাঝেই অনেক খাদ্য অপচয় হয়। তবে অপচয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। সেটি হলো এক বেলার বেঁচে যাওয়া খাবার আর না খাওয়া। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে খাদ্য অপচয়ের কারণ শনাক্ত করা এবং সেটিকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।

সর্বোপরি বলতে চাই, খাবার অপচয়কে উলেস্নখ করা হয়েছে 'বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি' হিসেবে। ফলে এই দিকটিকে আমলে নিয়ে উদ্যোগী হতে হবে। ২০২২ সালে যত খাবার নষ্ট হয়েছে, তার ২৮ শতাংশ নষ্ট হয়েছে রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন ও হোটেলের মতো খাদ্য পরিষেবা ব্যবস্থাগুলোতে। কসাই ও মুদি দোকানে নষ্ট হয়েছে ১২ শতাংশ খাবার। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৬০ শতাংশ খাবার নষ্ট হয়েছে বাসাবাড়িতে। এর পরিমাণ ৬৩ কোটি ১০ লাখ টন। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে খাদ্য অপচয় রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে