রাজধানীতে রমজানে বিকাল সাড়ে ৩টায় অফিস ছুটির পর ইফতারের আগ পর্যন্ত নগরীর প্রতিটি সড়কে তীব্র যানজট দৃশ্যমান। একই সময়ে সব যানবাহন গন্তব্যে রওনা দেওয়ায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে অযাচিত যানজট তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছে ট্রাফিক বিভাগ। দপ্তরটি যানজট নিরসনে বেশ কয়েকটি বিশেষ নির্দেশনাও দিয়েছে। তবে কাজে আসেনি কোনো নির্দেশনা। উল্টো বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে তীব্র যানজটে মানুষের ক্ষোভ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, রাজধানীতে প্রতি ২ ঘণ্টার যাত্রাপথে ৪৬ মিনিটই নষ্ট হয় যানজটে। এভাবে বছরে গড়ে ২৭৬ ঘণ্টা নষ্ট হয়। নষ্ট হয় কর্মঘণ্টা। কমে যায় শ্রমের মান। ঢাকার ৭০ শতাংশ রাস্তা ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশার দখলে থাকে। ঢাকায় মোটর সাইকেলের সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ আর রিকশার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর এ ভয়াবহ যানজট একদিনে সৃষ্টি হয়নি। সময়মতো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে ভুল পরিকল্পনায় এমন দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ক্রমাগত অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ফুটপাত দখল, ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে না চলা, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, অপ্রশস্ত সড়ক, ফিটনেসবিহীন গাড়ির অবাধ চলাচল ঢাকাকে যানজটের নগরীতে পরিণত করেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ও মানহীন মিনিবাস, রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে যানজট। একইসঙ্গে ফুটপাত দখল করে হকারের পণ্যের পসরা বসিয়ে দখলদারত্ব, এলোমেলো স্থান থেকে গণপরিবহণে ওঠানামা এবং রাস্তা পারাপারে জেব্রাক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের অভ্যাস না থাকা, আইন অমান্যে জরিমানাসহ আইনের যথাযথ প্রয়োগে প্রশাসনের তৎপরতার ব্যর্থতা নগরীর যানজট বৃদ্ধির জন্য দায়ী। যানজট নিরসনে সরকারের রাজনৈতিক সময়োপযোগী ও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারলে সুফল আনা যাবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়ক নিরাপত্তায় যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের কাজের জবাবদিহি নেই। দায়িত্ব অবহেলার জন্য কাউকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না। তাই সরকার যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ এবং জনবল দিয়েও কাজ আদায় করতে পারছে না। তার মানে, সুশাসনের অভাব। এজন্য নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নগরে মেট্রোরেল এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে ফ্লাইওভার হওয়ার পরও যদি যানজট না কমে, তা হলে বিষয়টি নিত্যান্তই হতাশাজনক।
আমরা মনে করি, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে না এলে কোনোভাবেই যানজট নিরসন করা যাবে না। সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমাতে হবে, বাড়াতে হবে গণপরিবহণের সংখ্যা। যেসব সড়ক অপ্রশস্ত, সেসব কীভাবে কম সময়ে প্রশস্ত করা যায় ভাবতে হবে। এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করাই সমীচীন এবং এর কোনো অন্য বিকল্প নেই।