সীমান্তে হত্যাকান্ড, নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। বহু দেনদরবার, আলাপ-আলোচনা, সমঝোতা এবং প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সীমান্ত হত্যা যেমন বন্ধ হয়নি, তেমনি ঘটছে নির্যাতনের ঘটনাও। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধে নেওয়া হয়েছে নানা ধরনের উদ্যোগ। মিলেছে আশ্বাসও। কিন্তু এরপরেও একের পর এক সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশিরা।
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, নওগাঁর পোরশা উপজেলা নিতপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি এক যুবক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। তথ্য মতে, নিতপুর সীমান্ত চৌকির (বিওপি) এলাকা দিয়ে চোরাই পথে গরু নিতে ভারতের অভ্যন্তরে আল আমিনসহ চার যুবক প্রবেশ করেন। ভারতীয় ১৫৯ টেক্কাপাড়া বিএসএফ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ নীলমারী ২৩২ পিলার এলাকার এক কিলোমিটার ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে টহল দলের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই আল আমিনের মৃতু্য হয়। এ সময় অপর তিনজন পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ বিজিবি নওগাঁ ব্যাটালিয়নের সিও জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে কমান্ডার পর্যায়ে ফ্ল্যাগ মিটিং হয়েছে।
আমরা বলতে চাই, সীমান্ত হত্যার বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসে, তবু যখন এমন ঘটনা রোধ হচ্ছে না তখন বিষয়টি দুঃখজনক। এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, সীমান্তে চোরাচালান নৈমিত্তিক ঘটনা এবং এর সঙ্গে উভয় দেশের নাগরিকই জড়িত এমন বিষয় জানা গেলেও, বাংলাদেশের নাগরিকরা বারবার হত্যাকান্ডের শিকার হয়- যা অত্যন্ত পরিতাপের। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় এবং ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র কিন্তু এরপরও সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। যা আমলে নিয়ে এর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এটাও আমলে নেয়া সমীচীন, বিভিন্ন সময়েই সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। এমনকি বিএসএফের নির্যাতনেও মারা গেছেন। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে হবে এবং একের পর এক যখন সীমান্তে হত্যাকান্ড ঘটছে, তখন সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যত দ্রম্নত সম্ভব এর সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, সাম্প্রতিক কালে এটা জানা গিয়েছিল যে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গুলিতে যেন আর কারো প্রাণ না যায়, সে ব্যাপারে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। ঢাকার পিলখানায় 'বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলন' শেষে একথা জানিয়েছিল উভয়পক্ষ। ফলে এরপরও যখন সীমান্তে হত্যা বন্ধ হচ্ছে না তখন বিষয়টি অত্যন্ত উৎকণ্ঠার- যা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। আমরা বলতে চাই, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে ভারত বারবার বাংলাদেশকে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। বিজিবির সঙ্গে একাধিক বৈঠক ও সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা বন্ধে নানা কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু এরপরও যখন সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটছে তখন তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা চাই, কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্যাতন ও হত্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসুক। একইসঙ্গে বলা দরকার, কেন সীমান্তে হত্যাকান্ড ঘটছে, নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে- তা আমলে নিয়ে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয় নির্র্ধারণ সাপেক্ষে সামগ্রিক পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে। কেননা, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখা ও আস্থা বাড়ানোর জন্য সীমান্ত হত্যা কিংবা নির্যাতন বন্ধের বিষয়টি জরুরি। অপরাধ করলে আইন মোতাবেক শাস্তি হবে কিন্তু নির্যাতন কিংবা হত্যা কাম্য হতে পারে না।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এবারের ঘটনাটি আমলে নিতে হবে এবং সামগ্রিকভাবে সীমান্তে হত্যাকান্ড ও নির্যাতনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। এর পাশাপাশি সীমান্ত হত্যার কারণ শনাক্ত করে হত্যা শূন্যের কোঠার নামিয়ে আনতে সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, এর আগে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অধিক কার্যকরী উদ্যোগ হিসেবে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তদুপরি সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।