আবার বেড়েছে পেঁয়াজের দাম কার্যকর উদ্যোগ নিন
প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
ফের পেঁয়াজের বাজার গরম। ভারত থেকে আমদানি বন্ধের খবরে ফের বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। দুদিন আগের তুলনায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১২ এবং খুচরায় বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় থাকা বাংলাদেশ পণ্যটি আমদানিতেও রয়েছে ১ নম্বরে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় এ আমদানিনির্ভরতা। আর সেই সুযোগে সরবরাহ চেইনে সামান্য কমবেশি হলেই সুযোগ নেয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। তবে চাহিদা বাড়ায় দামের ওপর প্রভাব পড়েছে। কিছুদিন আগেও খুচরা বাজারে ৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হতো। এখন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। ভারত অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৭ লাখ ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করে বাংলাদেশ। ওই বছর বিশ্বের আর কোনো দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেনি। ২০২৩ সালের ১১ মাসে পেঁয়াজের আমদানি হয় ৮ লাখ ৬৪ হাজার টন। আবার জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। দেশে পেঁয়াজের নিট উৎপাদন ২২ লাখ থেকে ২৩ লাখ টন। অন্যদিকে, চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ থেকে ৩২ লাখ টন। তাই অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির পরও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না।
ভারত ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর এক ঘোষণায় পেঁয়াজ রপ্তানি চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে। এতে ওই সময় দাম বেড়ে গিয়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে দাঁড়ায়। এরপর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, এ সংবাদে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে এখনো পেঁয়াজের সংকট নেই। আমদানি ও দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের বিশাল মজুত রয়েছে বিভিন্ন গুদামে।
এবারো অজুহাত তুলে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হলো। হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে সাধারণ ক্রেতারা। হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়লেও মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা এখানো দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ক্রেতাদের দাবি, যারা সিন্ডিকেট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি সাধারণ ক্রেতাদের।
এর আগেও ভারত একাধিকবার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছিল। তখনো এ দেশের বাজার সিন্ডিকেট একই কাজ করেছিল। মূলত তাদের কাজ হচ্ছে জনগণের পকেট কাটা। নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর আমরা সিন্ডিকেট ভাঙার কথা শুনেছি। এখন বাস্তবচিত্র ভিন্ন।
মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। তখন আর বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। বিপাকে পড়তে হবে না ক্রেতাদের। আমরা দীর্ঘদিন থেকেই লক্ষ্য করে আসছি, আমদানিকৃত পেঁয়াজের আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের কৃষক পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পান না। অন্যদিকে, প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ পচে নষ্ট হয়ে যায়।
আমরা মনে করি, পেঁয়াজের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেদিকেই বিশেষ মনোযোগ দেয়া উচিত। বাজারে পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক ঘটনা। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে।