একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশ্নে অন্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা করে বৈদেশিক বাণিজ্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- যা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ সমীচীন। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সফররত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এছাড়া নবায়ন করা হয়েছে পুরনো একটি চুক্তি। আমরা মনে করি, এটি অত্যন্ত ইতিবাচক এবং আশাব্যঞ্জক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। যা আমলে নিয়ে এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
জানা গেছে, সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের আওতায় ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিট করে দেবে বাংলাদেশ। ভুটানের জন্য কুড়িগ্রামে একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হবে। কুড়িগ্রামে এই বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ভুটানকে ১৯০ একর জমি দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে। আগামী বছর থেকে বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হবে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদার করা হবে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আগে যে চুক্তি রয়েছে সেটি ফের নবায়ন করেছে দুই দেশ এসবও জানা গেছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া ভুটান থেকে জলবিদু্যৎ আমদানি করার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'জলবিদু্যৎ আমদানিতে ভুটানের সঙ্গে এবার চুক্তি সই হবে না। আরও কিছু কাজ বাকি আছে। তবে আমরা আশা করছি, এটি খুব শিগগিরই হবে।' ফলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এটিও আমলে নিয়ে উদ্যোগ অব্যাহত রাখা।
তথ্য মতে, সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের বৈঠক শেষে এসব সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বেলা সোয়া ১টার দিকে ভুটানের রাজা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে টাইগার গেটে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর একান্ত বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের রাজা। একান্ত বৈঠক শেষে তারা দুই দেশের প্রতিনিধি দল নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বলা দরকার, এর আগেই এটা আলোচনায় এসেছিল যে, 'দুই দেশের সমঝোতার আওতায় থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধন হবে। অন্যদিকে, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।' ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এর যথাযথ বাস্তবায়নেও সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ, ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়ার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। তাই এই দিকটিকে সামনে রেখে আরো বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কেননা, জনসংখ্যা জনস্পদে রূপান্তর করতে একদিকে যেমন দক্ষতা বাড়াতে উদ্যোগ জরুরি, অন্যদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এমন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখারও বিকল্প নেই।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ ও ভুটান এই দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এছাড়া নবায়ন করা হয়েছে পুরনো একটি চুক্তি। এগুলোর যথাযথবাস্তবায়ন হোক। একইসঙ্গে দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও অব্যাহত রাখতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের পাশাপাশি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাক এবং সম্পর্ক আরও বেশি দৃঢ় হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।