পুরান ঢাকার চকবাজারে ফের আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ইসলামপুরে অবস্থিত কমিশনার বিল্ডিংয়ে কেমিক্যাল গুদামে আগুন লেগেছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ এক থেকে দেড় কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি দাবি করলেও তাৎক্ষণিকভাবে এর পরিমাণ জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস। ভবনটিজুড়ে কেমিক্যালের স্তূপ থাকায় আগুন নেভানোর কাজটি বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়াও ঘটনাস্থলের আশপাশে অসংখ্য ভবন ও বাড়ি ছিল। যদি এই আগুন ছড়িয়ে পড়ত তাহলে ভয়াবহ একটি অবস্থা তৈরি হতো। এখানে দুটি বিদু্যতের ট্রান্সফর্মার রয়েছে। একটিও যদি বিস্ফোরণ হতো তাহলে ভয়ানক অবস্থা তৈরি হতো। ভবনটিতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। এটি একটি কেমিক্যাল এবং পস্নাস্টিক রিসাইকেল প্রতিষ্ঠান। এখানে বিভিন্ন পস্নাস্টিক কণা ও কেমিক্যাল দ্রব্যাদি স্তূপ করা ছিল। এখানকার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই অপরিকল্পিতভাবে স্টক আকারে কেমিক্যাল এবং অন্যান্য দ্রব্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বিষয়টি বারবার আলোচনায় উঠে এলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। উপরন্তু পুরানা ঢাকার মানুষের জীবনঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সর্ব মহলের বারবার নিষেধ সত্ত্বেও পুরান ঢাকায় অগ্নিকান্ডের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ কেমিক্যাল মজুত করে রাখা বন্ধ হয়নি। এরই পরিণতিতে শুক্রবার গভীর রাতে চকবাজারের ইসলামবাগ এলাকায় একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা দেখছি, পুরান ঢাকায় রাসায়নিক গুদামের কারণে ছোটখাটো অগ্নিকান্ড লেগেই আছে। ঘনবসতিপূর্ণ আর ঘিঞ্জি এলাকায় অনেক বাসাবাড়ির নিচে এখনো ঝুঁকিপূর্ণভাবে তৈরি করা হচ্ছে নানা ধরনের কেমিক্যালসামগ্রী। এ দৃশ্যপট না বদলালে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতেই থাকবে- যা বলাই বাহুল্য। আমরা 'নিমতলী' কিংবা 'চুড়িহাট্টা'র মতো আর কোনো ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হতে চাই না। পুরান ঢাকা থেকে অনতিবিলম্বে সব রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নিতে হবে। এজন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নিতে হবে পদক্ষেপ। আমরা আর কোনো অজুহাত বা আশ্বাসের বাণী শুনতে চাই না। শুধু পুরান ঢাকা নয়, রাজধানীর সব আবাসিক এলাকা থেকে জরুরি ভিত্তিতে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানা দ্রম্নত সরিয়ে নিতে হবে। তা ছাড়া অন্য বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দিকনির্দেশনা যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুরান ঢাকা থেকে সব কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়া হবে এবং দাহ্য কেমিক্যাল আনা-নেওয়াও বন্ধসহ সেখানে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলা হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।