বেড়েছে বিদেশি ঋণের পরিমাণ
কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাভাবিকভাবেই যদি অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়ে, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে সামগ্রিক বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) এ ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৭ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এসব ঋণের ৭৯ শতাংশই নিয়েছে সরকার এবং বাকি ২১ শতাংশ ঋণ নিয়েছে বেসরকারি খাত। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি ঋণের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এখানে বিশেষভাবে উলেস্নখ্য, ১৫ বছর আগে ২০০৮ সাল শেষে ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে দেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৭৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩৪২ শতাংশ। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দেশের বিদেশি ঋণ ৪ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। এ সময়ে সরকারের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। সরকারের বাড়লেও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ ৩৩ কোটি ডলার কমেছে। গত ডিসেম্বর শেষে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। আর বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২০ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে তা দাঁড়ায় ৯৮ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে। এর মানে গত ৮ বছরে দেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১৮ সালের পর বিদেশি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৮ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ ঋণের পরিমাণ ৯৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৯৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। আর গত বছর শেষে এ ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। বিদেশি এসব ঋণ এসেছে সরকারি বিভিন্ন মেগা প্রকল্প নির্মাণের জন্য। এর মধ্যে সর্বোচ্চ এসেছে রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে। এ বিদু্যৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে রাশিয়া। পায়রা তাপবিদু্যৎ কেন্দ্র নির্মাণে ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে চীন থেকে। আর রামপাল তাপবিদু্যৎ কেন্দ্র নির্মাণে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে ভারত। এছাড়া মাতারবাড়ী বিদু্যৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য প্রকল্প ঘিরে জাপান থেকে ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ঋণসহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ বিদেশি ঋণ। অর্থনীতিতে ঝুঁকির প্রধান প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া, সম্পদ ও আয়বৈষম্য এবং সরকারি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও বেকারত্ব।
আমরা মনে করি, যখন ঝুঁকির বিষয়গুলো সামনে আসছে তখন তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ জরুরি এবং সে অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।