সড়কে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা। নানা ধরনের উদ্যোগেও সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব হচ্ছে না। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সড়ক নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশের সর্বত্রই অপরিপক্ব লোকের হাতে মোটর সাইকেল চলে গেছে, ফলে ৪০ শতাংশ মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছেন। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, নভেম্বরে দেশে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৮.২৬%। বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঢাকা বিভাগে।
গত ফেব্রম্নয়ারি মাসে দেশে ৫০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৫৫৫ জন নিহত ও ১ হাজার ৩১ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭৩টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ২১০ জন নিহত ও ১২৯ জন আহত হয়েছে; যা মোট দুর্ঘটনার ৩৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ, নিহতের ৩৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ ও আহতের ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ।
এটা সত্য, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার কারণ কিশোর-যুবকদের বেপরোয়াভাবে মোটর সাইকেল চালানো; অতি উচ্চগতির মোটর সাইকেল ক্রয়ে সহজলভ্যতা ও চালনায় বাধাহীন সংস্কৃতি; মোটরযান চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতা; বাস-ট্রাক-পিকআপ-প্রাইভেটকার মাইক্রোবাসসহ দ্রম্নতগতির যানবাহনের বেপরোয়া গতি; চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা; ইজিবাইক-সিএনজি-নসিমন-ভটভটি ইত্যাদি স্বল্পগতির যানবাহন অদক্ষ হাতে চালানো; সড়ক-মহাসড়কে ডিভাইডার না থাকা; কিশোর-যুবকদের গতির প্রতি আকৃষ্ট করতে মোটর সাইকেলের বিজ্ঞাপনের উত্তেজনাকর ভাষা-ভঙ্গি; সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা; পারিবারিকভাবে সন্তানদের বেপরোয়া আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং দেশে কলুষিত রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় কিশোর-যুবকদের মধ্যে বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানোর সংস্কৃতি গড়ে ওঠা ইত্যাদি। তারা এতটাই বেপরোয়া যে, রাস্তায় যানজট থাকলে ফুটপাতে মোটর সাইকেল উঠিয়ে দেয়। ফলে মানুষ চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় তারা ট্রাফিক সিগন্যালও মানে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে যাতায়াতজনিত দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের। কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে, কারা এর জন্য দায়ী- তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। আমরা মনে করি, সড়কে মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মোটর সাইকেল আরোহীরা খুবই বেপরোয়া। তারা সুযোগ পেলেই দ্রম্নত বেগে মোটর সাইকেল চালান। ফলে যত্রতত্র দুর্ঘটনা ঘটছে এবং মানুষ মারা যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, ছোট বড় দুর্ঘটনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবেই।