ঋণ গ্রহণ কিংবা অর্থ আত্মসাতের মতো ঘটনা কতটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই ঋণ সংক্রান্ত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাসহ ব্যাংকিং খাতে সামগ্রিকভাবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, অস্তিত্বহীন কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে হল-মার্ক গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তানভীর মাহমুদ এবং তার স্ত্রী ও কোম্পানির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া একযুগ আগে দুদকের দায়ের করা এ মামলার বাকি আট আসামিকে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড।
তথ্য মতে, মঙ্গলবার ঢাকার প্রথম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আবুল কাশেম এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এ প্রসঙ্গে এটাও উলেস্নখ করা দরকবার, সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় ২০১২ সালে হল-মার্ক গ্রম্নপের মালিক, কর্মকর্তা এবং সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়েছিল। আর এ মামলা তারই একটি। আদালতের রায়ে তানভীর ও জেসমিনকে দন্ডবিধির ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ৪২০ ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে তাদের।
আমরা বলতে চাই, আদালতের রায়ের বিষয়টি যেমন আমলে নেওয়া জরুরি, তেমনিভাবে ব্যাংকিং খাতে যেন কেউ অসচ্ছভাবে ঋণ গ্রহণ করতে না পারে কিংবা কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা না ঘটে সেটিও নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন জরুরি। উলেস্নখ্য, জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় হল-মার্ক গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীরসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় এই মামলা করে দুদক। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার, প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় জালিয়াতির মাধ্যমে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। এছাড়া আমলে নেওয়া দরকার, মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন (বর্তমান ইন্টারকন্টিনেন্টাল) শাখা থেকে হল-মার্ক মোট ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে দায় (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
অন্যদিকে, এটাও জানা যায়- তদন্ত শেষে পরের বছর ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর ১১টি মামলায় হল-মার্ক গ্রম্নপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, তার ভায়রা তুষার আহমেদসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়। পরে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রম্নয়ারি ও ২৭ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এই ১১টি মামলা বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বদলি করা হয়। মঙ্গলবার একটি মামলায় রায় ঘোষণা করা হলো। বাকি মামলা বিচারাধীন। আমরা চাই, প্রত্যেকটি মামালার বিচার শেষ হোক, একইসঙ্গে আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা এবং কেউ যেন অর্থ আত্মসাতের মতো ঘটনা ঘটাতে না পারে সেই লক্ষ্যে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, হল-মার্ক গ্রম্নপের ঋণ জালিয়াতি ব্যাংকিং ইতিহাসের এক বিস্ময়কর ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন আদালত- যা আমলে নিতে হবে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করেন, তাদের মৃতু্যদন্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত বলে আদালত মনে করেন। তবে সংশ্লিষ্ট আইনে এই অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদন্ড। তাই ৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে, ঋণদানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। যে কোনো ধরনের অনিয়ম অবব্যস্থাপনা বন্ধে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি প্রত্যাশিত।