বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কিশোর অপরাধ সঠিক পদক্ষেপ নিন

  ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
কিশোর অপরাধ সঠিক পদক্ষেপ নিন

আধুনিক বিশ্বের অসংগঠিত সমাজ ব্যবস্থায় দ্রম্নত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের নেতিবাচক ফল হলো কিশোর অপরাধ। পরিবার কাঠামোর দ্রম্নত পরিবর্তন, শহর ও বস্তির ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ এবং সমাজজীবনে বিরাজমান নৈরাজ্য ও হতাশা কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির প্রধান কারণ। অপসংস্কৃতির বাঁধভাঙা জোয়ারও এজন্য অনেকাংশে দায়ী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, 'তের চৌদ্দ বছরের মতো এমন বালাই আর নেই।' এ বয়সের ছেলেমেয়েদের সামনে থাকে অদম্য আশা আর জীবন জগৎ সম্পর্কে থাকে অতিকৌতূহল। অনেক সময় প্রতিকূল পরিবেশের কারণে আশাভঙ্গের বেদনায় হতাশার হাত ধরে নৈরাশ্যের অন্ধকারে পতিত হয় তাদের জীবন। এতে কিশোর বয়সিরা ধীরে ধীরে অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ে। কিশোর অপরাধ দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কিশোর বয়সিদের দ্বারা সংঘটিত সমাজে বিদ্যমান মূল্যবোধ ও নিয়মনীতিবিরোধী কাজই মূলত কিশোর অপরাধ। তবে সামাজিক মূল্যবোধ রাষ্ট্র, শহর, গ্রাম বা এলাকাভেদে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এক সমাজে যে কাজ বা আচরণ মূল্যবোধ ও নীতিবিরোধী অন্য সমাজে তা নাও হতে পারে। অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে কিশোর অপরাধ হলো প্রচলিত সামাজিক নিয়মকানুনের ওপর অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরদের অবৈধ হস্তক্ষেপ। কোনো শিশুকে তখনই অপরাধী মনে করতে হবে- যখন তার অসামাজিক কাজ বা অপরাধ প্রবণতার জন্য আইনগত ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ ধরনের অস্বাভাবিক ও সমাজ বিরোধী কাজ যা কিশোর-কিশোরীরা সংঘটিত করে থাকে। বর্তমানে কিশোর গ্যাং সমাজের বিফোড়া। হেন কোনো অপরাধ নেই, তারা করছে না।

আজকের কিশোর-কিশোরীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই কিশোর অপরাধের প্রবণতা দেশ, জাতি ও সমাজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়। কিশোর অপরাধের প্রভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হয়। শিশু-কিশোর দ্বারা রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, পকেটমারের মতো অপরাধ জনগণের আর্থসামাজিক নিরাপত্তায় চরমভাবে বিঘ্ন ঘটায়। ছাত্রী অপহরণ, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ ইত্যাদি কারণে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। কিশোর অপরাধের কারণে সমাজে মাদকাসক্তি ও যৌনাচার বেড়েই চলেছে- যা সমাজ জীবনে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। এ ছাড়া কিশোরদের দ্বারা পিতা-মাতা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের অবাধ্যতা, অশোভন আচরণ, পারিবারিক জীবনে শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। সর্বোপরি কিশোরদের অর্থবহ জীবনকে ধ্বংস করে জাতিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

বর্তমানকালে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বা সমাজেই শিশু ও কিশোর অপরাধের প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশে এর প্রবণতা ব্যাপক। শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও জনসংখ্যার চাপ আর্থসামাজিক অবস্থাকে জটিল করে তুলেছে এবং কিশোর অপরাধজনিত সমস্যা। কী কারণে শিশু ও কিশোররা অপরাধ করেছে সেটা খুঁজে বের করে তার প্রতিকার করা এবং উপযুক্ত শিক্ষা, উপদেশ প্রদান করে কিশোরদের সংশোধিত করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করলে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে