বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

  ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের মোট সাড়ে ২৫ শতাংশ পরিবার ঋণ করে তাদের খাদ্য চাহিদা মেটায়। প্রতি পরিবারে এই ঋণের পরিমাণ গড়ে ৯০ হাজার ২৩ টাকা। পরিবারগুলো ঋণগ্রস্ত হওয়ার ফলে তাদের চাহিদামতো খাদ্য চাহিদা মোটানো সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে, স্বাস্থ্যঝুঁকি, পুষ্টিহীনতা, শিক্ষাসহ সামগ্রিকভাবে মানবজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সামনে পড়ছে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য।

চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আয়-ব্যয়ের অসঙ্গতি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি নেই। আয় কম, ব্যয় বেশি। পরিবারের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খেতে হয়। এর পরে বাড়তি ব্যয় অর্থাৎ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা সামাজিক কোনো কর্মকান্ডে যোগ দিলে সুনির্দিষ্ট আয় থেকে অর্থব্যয় হয়। এর ফলে, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, আত্মীয়, মহাজন অথবা এনজিও থেকে ঋণ করে খাদ্য চাহিদা মেটাতে হয়।

এই চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে। শনিবার বিবিএসের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। বিবিএস এবারই প্রথম 'খাদ্য নিরাপত্তা পরিসংখ্যান-২০২৩' প্রকাশ করল। মৌলিক চাহিদা পূরণে খানার (পরিবার) খাদ্য ব্যয়ের জন্য গৃহীত ঋণের অবস্থা, ঋণের উৎস, প্রাপ্ত ঋণের পরিমাণ, খাদ্যবহির্ভূত অন্যান্য ঋণ নেওয়ার উদ্দেশ্য, ঋণ অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমাণ সময় এবং এলাকাভেদে ঋণ পরিশোধের সময় যাচাই করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

এটা স্বীকার করতেই হবে, এখনো দেশে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এর উপরে যারা আছে, তারাও যে খুব ভালো অবস্থায় আছে তাও না। এ ছাড়া অধিকাংশই নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। মানুষের আয় কমেছে। রোগ-ব্যাধি বা লেখাপড়া ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের মতো বাড়তি খরচের মুখে পড়লেই যাদের ঋণ করতে হয়। এটা সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার প্রতিফলন। এখান থেকে উত্তরণের প্রধান উপায় হচ্ছে- মানুষের আয় ও আয় বাড়ানোর সুযোগগুলো বাড়াতে হবে। এ জন্য শিক্ষা দক্ষতা স্বাস্থ্যসেবা এগুলো যদি সামাজিকভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা হলে আয় বাড়ানোর সুযোগ তারা নিজেরাই খুঁজে নিতে পারবে।

এ ছাড়া সরকারের যেসব সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি রয়েছে সেগুলোর ব্যাপ্তি, প্রাপ্তি ও স্থায়িত্ব বাড়াতে হবে। যাতে করে এসব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় বিঘ্ন না ঘটে। মনে রাখা দরকার, খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে পুষ্টি নিরাপত্তাও জড়িত। এর ফলে, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য স্কুলে খাদ্য চালু করা, ফ্যামিলি কার্ড সেফটি, প্রাপ্তির ব্যাপ্তি বাড়ানো, স্বল্প মূল্যে খাদ্য সরবরাহ আরও বাড়ানো জরুরি।

পরিবার সমাজ তথা রাষ্ট্র থেকে দারিদ্র্য দূর হোক এটাই আমরা চাই। তবে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে না পারলে দারিদ্র্য পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়। এ কারণে আমাদের যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা সে অবস্থায় এখনো যেতে পারিনি। এসব বাধা দূর করতে পারলে দারিদ্র্য আশানুরূপ হ্রাস করা সম্ভব। সম্ভব পর্যায়ক্রমে মধ্যম আয়ের ও উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাও। তবে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং, আমাদের সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে