জলদসু্য আতঙ্ক বঙ্গোপসাগর হোক নিরাপদ
প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
ভারত মহাসাগরে চট্টগ্রামের কবির গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের কয়লাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুলস্নাহর নাবিকদের জিম্মি করার ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। আর একইসঙ্গে সোমালিয়ান জলদসু্যদের নেপথ্যের কাহিনী এবং তাদের তৎপরতা সংক্রান্ত নানা বিষয়ও সামনে এসেছে। অন্যদিকে, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, সোমালিয়ান জলদসু্যদের ভয়ংকর রূপ সামনে এলেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশি জলদসু্যরাও! তথ্যমতে, চট্টগ্রামের কক্সবাজার থেকে খুলনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ জলসীমায়ও দেশি-বিদেশি পণ্যবাহী জাহাজ, এমনকি মাছ ধরার ট্রলারেও প্রতিনিয়ত জলদসু্যর হানায় অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। খুন, গুম, অপহরণ, চুরি ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটছে বঙ্গোপসাগরে পণ্য নিয়ে আসা বিভিন্ন জাহাজ ও মাছ ধরার ট্রলার।
আমরা বলতে চাই, খুন, গুম, অপহরণ, চুরি ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর ঘটনা কতটা উৎকণ্ঠাজনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। জানা যাচ্ছে, চলতি মার্চ মাসে এ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে তিনটি জলদসু্যর হানার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, গত দুই মাসে ঘটেছে দুটি জলদসু্যর আক্রমণের ঘটনা। এর আগে গত বছর ১৬টি জলদসু্যর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জলদসু্য আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে মাছ ধরার ট্রলারের জেলেদের ওপর। যাদের গুম, খুন, অপহরণের মাধ্যমে বড় অঙ্কের মুক্তিপণও আদায় করেছে জলদসু্যরা। আমরা মনে করি, যখন এসব তথ্য সামনে আসছে তখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। কেননা, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও ভয়াবহ ঘটনা রোধ না হলে তা যেমন জেলেদের জন্য নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি তৈরি করবে অন্যদিকে, নানা ধরনের ভয়ংকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকবে- যা কাম্য হতে পারে না।
লক্ষণীয়, ভুক্তভোগীদের মতে, বঙ্গোপসাগরের জলদসু্য নিয়ন্ত্রণে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে কুতুবদিয়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে মিরসরাই, ফেনী, নোয়াখালী, বরিশাল থেকে খুলনা পর্যন্ত অন্তত ৩০টিরও বেশি থানার পুলিশ, কোস্ট গার্ড,র্ যাব তৎপর রয়েছে। অথচ বঙ্গোপসাগরে তৎপর তিন হাজারের মতো জলদসু্যকে তারা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদিওর্ যাবের প্রচেষ্টায় গত এক দশকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও সুন্দরবন অঞ্চলে অর্ধসহস্রাধিক জলদসু্য আত্মসমর্পণ করে। এরপর সাগরে জলদসু্যর তৎপরতা কিছুটা কমে এলেও গত বছরের শুরু থেকে তা আবার বেড়ে গেছে বলে খবরে ওঠে আসছে- যা এড়ানোর সুযোগ নেই। উলেস্নখ্য, সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ দুপুর আড়াইটার সময় সন্দ্বীপের দীর্ঘাপাড় থেকে উড়িরচর প্রান্তে আসার পথে ট্রলার ডাকাতির ঘটনা ঘটে। বামনী নদীর মাঝপথে স্পিডবোটে আসা সাত-আটজনের একটি দল সোমালিয়ান জলদসু্যদের মতো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যাত্রীবাহী ট্রলারে থাকা যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে। আর এ সময় দলটি তাদের কাছ থেকে টাকা, স্বর্ণালংকার, মুঠোফোনসহ মালামাল ছিনিয়ে নেয়। যাত্রীদের মধ্যে কোনো একজনের মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ঘটনার এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় সন্দ্বীপ থানায় মামলাও হয়।
আর শুধু এ ঘটনাই নয়, এর আগে গত ১১ মার্চ বঙ্গোপসাগরে সিরিয়ান পতাকাবাহী জাহাজের পেন্ট স্টোরের তালা ভেঙে অন্তত ৬৫ ড্রাম রং লুট করে জলদসু্যরা। এছাড়া গত ৬ মার্চ বুধবার চট্টগ্রাম থেকে সিমেন্টের ক্লিংকার লোড করে এমভি আকিজ লজিস্টিক-২৩ নামে একটি জাহাজ কুতুবদিয়া বাতিঘরের প্রায় চার কিলোমিটার পশ্চিমে নোঙর করে। পরদিন রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে বড় একটি ফিশিং ট্রলারে করে দেশীয় তৈরি অস্ত্র নিয়ে জাহাজে ওঠে মুখোশধারী ২৫-৩০ জনের সংঘবদ্ধ জলদসু্যর দল। এ সময় জাহাজের মাস্টারসহ ১২ জন কর্মচারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করা হয়। মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, ব্যাটারি, ইঞ্জিন-রাডার-ইকোসাউন্ডের মনিটর, জিপিএস, সোলার প্যানেলসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
সর্বোপরি, আমরা বলতে চাই- যখন সোমালিয়ান জলদসু্যদের আলোচনার মধ্যে বঙ্গোপসাগর অনিরাপদ এবং পিছিয়ে নেই বাংলাদেশি জলদসু্যরাও- এমন বিষয় সামনে আসছে; তখন জলদসু্য সংক্রান্ত আতঙ্কের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে এমনটি কাম্য।