যে কোনো কারণেই জনজীবনে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সঙ্গত কারণেই কোনো সংকট সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, লোডশেডিং হলে তা জনজীবনে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলে বলার অপেক্ষা রাখে না। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, রমজান-গরমের বিদু্যৎ চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে লোডশেডিং। অন্যদিকে, গরম বাড়ার সঙ্গে পালস্না দিয়ে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্পকারখানায়ও লোডশেডিং বাড়তে শুরু করেছে। ফলশ্রম্নতিতে দেখা যাচ্ছে- জনভোগান্তি যেমন বাড়ছে, তেমনি শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমছে। অন্যদিকে, গ্রামাঞ্চলে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ কাজ স্বাভাবিক রাখতে না পারায় ফসল উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। বিপাকে হ্যাচারি পোলট্রি খাত; ব্যয় বেড়েছে কুটির ও মাঝারি শিল্পে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
এক্ষেত্রে এটাও বিবেচনায় নেওয়া দরকার, সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা- সামনে গরম আরও বাড়লে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিও বাড়বে। এছাড়া বলা দরকার, গ্যাস সংকটের কারণে বিদু্যৎ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হলে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়ে পড়বে এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে। আর এই পরিস্থিতিতে শিল্পকারখানার উৎপাদন, সেচ কাজ ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক কার্যক্রম কতটা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিস্থিতি সামনে আসছে। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং তা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।
জানা যাচ্ছে, ঢাকাসহ সারাদেশে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবনে ভোগান্তি বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশ বিদু্যৎ উৎপাদন বোর্ড (বিপিডিবি) ভিন্ন কথা বলছে। তাদের দাবি, এখন পর্যন্ত কোথাও তেমন লোডশেডিং হয়নি। বিপিডিবির ওয়েব সাইটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ মার্চ দিনের পিক সর্বোচ্চ উৎপাদন ১১ হাজার ৫১৫ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ উৎপাদন ১২ হাজার ৬২১ মেগাওয়াট। এ সময় বিদু্যতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৭৮০ মেগাওয়াট। এই হিসাবে ওই সময় লোডশেডিং ছিল ১৫৯ মেগাওয়াট। এ দিন ময়মনসিংহে ১৫২ মেগাওয়াট লোডশেডিং হলেও দেশের অন্য কোথাও কোনো লোডশেডিং ছিল না। অথচ প্রকাশিত খবরে এটা সামনে এসেছে যে, ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ইফতার-সেহ্?রির পাশাপাশি বিভিন্ন সময় কয়েক দফা লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে স্মর্তব্য, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদু্যৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া চলছে সেচ মৌসুম। এ কারণে বিদু্যতের চাহিদা বেড়েছে। রমজানে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ইফতার ও তারাবির সময় তাই তেলভিত্তিক কেন্দ্র চালানো হচ্ছে। এরপরও এই দুই সময় লোডশেডিং হচ্ছে। উলেস্নখ্য, গত ৭ মার্চ দেশে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল ৮৩ মেগাওয়াট, ৮ মার্চ ৯৩ মেগাওয়াট, ৯ মার্চ ৯৬ মেগাওয়াট, ১০ মার্চ ৮০ মেগাওয়াট, ১১ মার্চ ১৪৯ মেগাওয়াট, ১২ মার্চ ৯০ মেগাওয়াট এবং ১৩ মার্চ ১৫৯ মেগাওয়াট।
প্রসঙ্গত, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিংয়ের জন্য দায়ী ট্রান্সমিশন ও জ্বালানির সীমাবদ্ধতা। জ্বালানি সীমাবদ্ধতার কারণে বেশি দামে ফার্নেস অয়েলনির্ভর বিদু্যৎকেন্দ্রগুলো চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন, তা পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া লক্ষণীয়, এক সপ্তাহের লোডশেডিংয়ের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, লোডশেডিং প্রতিদিনই ধাপে ধাপে বাড়ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, লোডশেডিং হলে যেমন কর্মযজ্ঞে স্থবিরতা নেমে আসে, তেমনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। আর হঠাৎ করেই বিদু্যতের লোডশেডিং বাড়লে উৎপাদন খাতসহ সব ধরনের কর্মযজ্ঞে নতুন করে সংকট দেখা দেয়। ফলে লোডশেডিং পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে লোডশেডিংয়ের প্রভাব বিবেচনায় রেখে করণীয় কী কিংবা এই সংকটকে কীভাবে দ্রম্নত নিরসন করা যায় সেই পথ খুঁজতে হবে এবং সেই মোতাবেক উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়ে সর্বত্রই। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।