বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

থামছে না ছাত্রী নিপীড়ন কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

  ১৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
থামছে না ছাত্রী নিপীড়ন কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

কোনোভাবেই থামছে না ছাত্রী নিপীড়ন। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠাস্থান যেন ছাত্রী নিপীড়ন কেন্দ্র। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী নির্যাতন, নিপীড়নে কলুষিত হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা নিপীড়নের শিকার হয়ে শুক্রবার আত্মহত্যা করেছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, ইসলামী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। অবাক ব্যাপার যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাময়িক বহিষ্কার ছাড়া কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বড় অপরাধে ছোট মাত্রার শাস্তি হওয়ার কারণেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিনে দিনে ছাত্রী নিপীড়নে কলুষিত হয়ে উঠছে। এটা দেশের উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে এক বিপজ্জনক বার্তা।

অপ্রিয় হলেও সত্য, ছাত্রী নিপীড়নে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগও করতে সাহস পান না ভুক্তভোগীরা। দু-একটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও অভিযোগ রয়েছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার না পাওয়ার। বিচার না পেয়ে দিনের পর দিন ট্রমার শিকার হন ছাত্রীরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি গড়ায় আত্মহত্যা পর্যন্ত। যেমনটি ঘটেছে অবন্তিকার ক্ষেত্রে। শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা সবখানেই ছাত্রী নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্রী নিপীড়ন-নির্যাতনে বরাবরই ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর ছাত্রলীগকে এখন পৃষ্ঠপোষকতা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই তাদের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচার হয় না।

ছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলাম অতীতে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় সহকারী প্রক্টর হিসেবেও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নের শিকার হওয়া মেয়েটি অভিযোগ করেছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করতেও সাহস পান না। আর নিপীড়করা কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না। আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হলে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলেই এগুলো বন্ধ করতে পারে।

আত্মহত্যা করা জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেছেন, আমার স্বামী মারা গেছেন এক বছর হলো। আমার মেয়ে ফাইরুজ অবন্তিকা মারা গেছেন। আমি এ শোক নিতে পারছি না। আমার আরেক ছেলে আছে। আমার মেয়ের এই দুর্ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ছেলেসহ শেষ হয়ে যাব। আমার মেয়ে অত্যন্ত উদ্যমী। আমার মেয়ে মেধাবী এটাই কি তার অপরাধ? সে তার সেশনে ফার্স্ট, এটাই কি তার অপরাধ? তার কথা আমলে নিতে হবে। অবন্তিকার মৃতু্যর খবরে উত্তাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কুমিলস্না নগরীর কান্দিরপাড়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে