ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে পাটজাত পণ্য বা সামগ্রী উৎপাদন ছিল একক বৃহত্তম শিল্প। পাটকে সোনালি আঁশ বলা হতো। এছাড়া স্মর্তব্য, দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল পাট। আর পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল পাট। কিন্তু একটা সময় পাট খাত জৌলুস হারায়। কিন্তু লক্ষণীয়, গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বে আবার পাটের রমরমা বাণিজ্য চলছে। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ্য, সম্প্রতি পাটের নতুন বাজার খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা অত্যন্ত সময়োপযোগী বলেই প্রতীয়মান হয়। দেশের সম্পদ খুবই সীমিত উলেস্নখ করে, পাটকে কাজে লাগানোর বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে আমাদের দেশে সবচেয়ে উন্নতমানের পাট হয় জানিয়ে বলেছেন, অর্থনীতিতে একে ব্যাপকভাবে কাজে লাগতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বাড়বে। বৃহস্পতিবার জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয়টি পাটকল ও 'বহুমুখী পাটপণ্য মেলা-২০২৪'-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
উলেস্নখ্য, দেশের রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে পাট ও পাটজাত পণ্য বেশি বেশি উৎপাদনে জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'পাট শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল- যা মোটেও শুভ ছিল না। এখন পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পাটের জন্ম রহস্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাট ও পাট শিল্পের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাট ব্যবহারে সুযোগও বেড়েছে। পাট দিয়ে নতুন পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন বাজার খুঁজতে হবে।' আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
এটা সত্য যুদ্ধ বা দুর্ভিক্ষে বিধ্বস্ত দেশগুলোতে দাতা সংস্থার ত্রাণসামগ্রী ব্যবহারে পাটের দড়ি ও বস্তার চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া পাটের সুতা দিয়ে শাড়ি, পাঞ্জাবির কাপড়, টুপি, জিন্স ও গরম কাপড় তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে, পাটখড়ি থেকে তৈরি হচ্ছে কম্পিউটার ও ফটোকপির মূল্যবান কালি। তথ্য মতে, বিশ্বের ১৩৫টি দেশে ২৮২টি পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এ ছাড়াও প্রায় ৫০ ধরনের পাটের কাপড় রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বে। মূলত বিশ্বে পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক এই তন্তু বহুমুখী ব্যবহার বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাঁধ ও নদী ভাঙন রোধে পাটের বস্তা ব্যবহার হচ্ছে। ফলে সার্বিক বিষয় সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পাটের বাজার বিস্তৃত করতে আরো বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা। স্মর্তব্য, বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে ২০১০ সালে গবেষণা দল পাটের জীবন রহস্য (জিনম সিকোয়েন্স) আবিষ্কার করে। ফলে পাটের মালিকানাও একমাত্র বাংলাদেশের। পাট মানেই এখন বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটকে কৃষিজাত ও রপ্তানিমুখী পণ্যের স্বীকৃতি এবং প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, '২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসার পর পাট নিয়ে গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়, পাটের জন্ম রহস্য উন্মোচন হয়। পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোতে আমাদের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এটি আবিষ্কারে। ফলে পাটের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। কাজেই সেই সব দিকে লক্ষ্য রেখেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।' আমরা মনে করি, এটি অত্যন্ত ইতিবাচক ও আশাব্যঞ্জক।
কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আবারও পাটের হারানো সুদিন ফিরে পাওয়া সম্ভব বলেই আমরা মনে করি। এ ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনাগুলো সামনে আসছে তাকে কাজে লাগানোসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।