বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি
  ১৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন আজ। এর আগে বাঙালি জাতি পালন করেছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। ১৯২০ সালের আজকের দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একজন নেতা তার দেশের মানুষকে মর্যাদাপূর্ণ আত্মপরিচয়ের আলোকে কী অপরিসীম সাহসিকতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন তার উজ্জ্বল উদাহরণ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের সর্বস্তরের মানুষ তথা আবালবৃদ্ধবনিতার ভালোবাসা, হৃদয় উজাড় করা শ্রদ্ধা ও সম্মানে তিনি অভিষিক্ত হয়েছেন। সমগ্র দেশের মানুষ অকৃত্রিম ভালোবাসার ও বিশ্বাসের কারণে তার ওপর অর্পণ করে পূর্ণ আস্থা, তাকে স্থান দেয় তাদের হৃদয়ে। আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আমরা তাকে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। স্মরণ করি তার কাজ, চেতনা ও আদর্শকে।

তিনি বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছেন, এ দেশের মানুষকে ভালোবেসেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, এটা আমাদের সৌভাগ্যের কথা। তিনিই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রূপকার এবং প্রতিষ্ঠাতা। দেশের মানুষের স্বার্থের বিষয়ে তিনি সব সময় ছিলেন আপসহীন। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি সব সময় ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ। কখনো কোনো কিছুর বিনিময় বা প্রলোভনে বা ভয়ে বিন্দুমাত্র নতি স্বীকার করেননি।

এ কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বঙ্গবন্ধু মাত্র ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কেবল পাকিস্তান আমলেই ১৮ বার কারারুদ্ধ হয়ে ১২ বছর জেলে কাটিয়েছেন। ২৪টি মামলা তিনি সাহসের সঙ্গে লড়েছেন এবং দুইবার মৃতু্যর সামনে দাঁড়িয়ে দেশবাসীর অকুণ্ঠ ভালোবাসায় ফিরে এসেছেন। তিনিই প্রথম নেতা যিনি মাতৃভাষায় প্রথম জাতিসংঘে ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষার মুখ উজ্জ্বল করেন। সত্তরের নির্বাচনে জাতির অবিসংবাদিত নেতারূপে তিনি অভিষিক্ত হন। গোটা জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেন। শুরু হয় এক অভূতপূর্ব আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন। দেশের মানুষকে তিনি মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করেন। এরই একপর্যায়ে আসে মহান একাত্তরের ৭ মার্চ। সেদিন ঢাকার ঐতিহাসিক জনসমুদ্রে তিনি যে ভাষণ দেন সেটাই হয়ে ওঠে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অতু্যজ্জ্বল মাইলফলক। তিনি ঘোষণা করেন 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। তিনিই তার নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতিকে পৌঁছে দিয়ে গেছেন স্বাধীনতার স্বর্ণ তোরণে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, মৃতু্যঞ্জয়ী মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে এক মুহূর্ত সময় অপচয় করেননি। পাকিস্তানি হানাদাররা শুধু এ দেশের ৩০ লাখ মানুষকেই হত্যা করেনি, এ দেশের স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, কলকারখানা সব ধ্বংস করে দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠনে শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম। দিন-রাত বঙ্গবন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রম আর কূটনৈতিক পারদর্শিতায় বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে থাকে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার হত্যার বিচার করা যাবে না- এই লক্ষ্যে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে বাদ দেওয়াই শুধু নয়, রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম থেকে তার নাম বা তার কথা প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক কথায় মানুষের মন থেকে বঙ্গবন্ধুর কথা, তার স্মৃতি, তার অবদান মুছে ফেলার যাবতীয় অপচেষ্টা করা হয় সে সময়। কিন্তু ইতিহাস বিকৃত করা, বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা, তার ভূমিকা খাটো করে দেখানো ইত্যাদি চেষ্টা যে সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে সেটা সময়ের পরীক্ষায় প্রমাণিত। তার কর্ম, সংগ্রাম ও চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে সারাবিশ্বে। বাঙালি জাতি চিরকাল শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে