শ্রমজীবী শিশু সঠিক পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেশে বর্তমানে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার শ্রমজীবী শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস)। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান বু্যরোর অডিটোরিয়ামে 'জাতীয় শিশুশ্রম ২০২২' এর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিবিএস জানায়, শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন চুক্তি এবং কাঠামোগত উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল করতে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। শিশুশ্রম নির্মূলে কৌশল নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ এবং সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩ পরিকল্পনা করা হয়েছে। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ এবং সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩ এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি জনসংখ্যার শ্রমশক্তি, কর্মসংস্থান এবং বেকারত্বের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা। এ ছাড়াও দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ জন। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরগুলোতে কর্মরত সব শ্রমজীবী শিশুর মধ্যে ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ ছেলে এবং ২ দশমিক ৪ শতাংশ মেয়ে শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি সেক্টর নিয়ে জরিপ করেছে বিবিএস। পাঁচটি সেক্টরের মোট শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে শুঁটকি মাছ উৎপাদনে রয়েছে ৮৯৮ জন, চামড়াজাত পাদুকা শিল্পে রয়েছে ৫ হাজার ২৮১ জন, ওয়েল্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজে ৪ হাজার ৯৯ জন, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে রয়েছে ২৪ হাজার ৯২৩ জন, অনানুষ্ঠানিক স্থানীয় টেইলারিং এবং পোশাক খাতে ২ হাজার ৮০৫ জন শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু নিযুক্ত রয়েছে। অঞ্চলভিত্তিক বিভাজনে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে কর্মরত শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে পলস্নীতে বাস করে ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অপরদিকে শহরে বাস করে ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে এই সেক্টরগুলোর বেশির ভাগ শ্রমজীবী শিশুই শহরে কাজ করে তা এ জরিপের মাধ্যমে উঠে এসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যেমন ভারী বোঝা বহন করার কাজে ছেলে শ্রমজীবী শিশু কিছুটা বেশি পাওয়া যায় যা ১৯ দশমিক ১ শতাংশ। কিছু শিশু আগুন, গরম যন্ত্রপাতি বা বিপজ্জনক বৈদু্যতিক সরঞ্জামের সংস্পর্শে আসে যা ২০ দশমিক ২ শতাংশ, ধুলাবালি, ধোঁয়া বা ধোঁয়ার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হয় এমন কাজে কর্মরত রয়েছে ৩১ দশমিক ১ শতাংশ শ্রমজীবী শিশু। বিরতি ব্যতীত দীর্ঘ সময় ধরে রোদে কাজ করে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অল্প সংখ্যক শ্রমজীবী শিশু (৩ দশমিক ৯ শতাংশ) কীটনাশক এবং অন্যান্য রাসায়নিকের সংস্পর্শে এসে কাজ করছে। এই পাঁচটি সেক্টরে গড়ে শিশুরা প্রতিদিন ৯ দশমিক ৪ ঘণ্টা কাজ করে। শিশুরা যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা সুরক্ষা পদ্ধতি মেনে চলে না। শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে বিনামূল্যে খাবার পায়। অসহায় দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষ যেন বৃদ্ধি না পায় রাষ্ট্রকে সেটা বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। উন্নয়ন আর সমৃদ্ধি সব মানুষের জন্য সমানভাবে হওয়া চাই। আমরা মনে করি, দেশের শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল শিশুদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এর বিকল্প নেই।