শেখ হাসিনার রাজনীতি উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ
হাজারও মানুষ তাকিয়ে আছে এক স্বপ্নদ্রষ্টা আলোর মশাল হাতে নিয়ে নেতৃত্বের বোঝাকে মাথায় নেওয়া চিরচেনা নেত্রী শেখ হাসিনার দিকে। হয়তো তিনি পারবেন, এই বাঙালির বিশ্বাস, এই বাঙালির দাবি।
প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
সাইফুর রহমান ফাহিম
বিজ্ঞান প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় শিল্পবিপস্নবের পর থেকে যেভাবে মানুষের জীবনে বিস্তর প্রভাব ফেলছে, অনুরূপভাবে রাজনীতি, রাজনীতির দিকদর্শন, রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপও দিন দিন উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। শতাধিক সংজ্ঞা রাজনীতির থাকলেও সহজ-সরল সাবলীল পরিচয় হলো রাষ্ট্র, পরিচালনার নীতিই হলো রাজনীতি। আর যারা এই নীতি অবলম্বন করে রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্বভার নিতে কাজ করেন, তারাই রাজনীতিবিদ। তেমনই একজন ত্যাগী, অতুলনীয় ও জগৎবিখ্যাত রাজনীতিবিদ হলেন এই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি জীবনভর সংগ্রাম করেছেন জাতির মুক্তির আশায়। নিজের জীবন দিয়ে গেলেও যোগ্য উত্তরসূরি রেখে গেছেন বলে রাজনীতিবিদদের দাবি। বলছিলাম বঙ্গবন্ধু জৈষ্ঠ্য সন্তান তার প্রিয় তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার কথা। অনেকের ধারণা, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবারে শাহাদত লাভের পর। প্রকৃতপক্ষে এটি নিতান্তই একটি ভুল পর্যবেক্ষণ। শেখ হাসিনার প্রকৃত রাজনীতি শুরু হয়েছিল ক্লাস সেভেন থেকে। খুব ছোটবেলায় যখন সবাই বাবার হাত ধরে স্কুলে যেত, তখন তিনি মায়ের হাত ধরে জেলখানায় যেতেন। সেখান থেকে সাহসিকতা-বলিষ্ঠতা অর্জিত হয়। জেলখানা একসময় হয়ে যায় নানার বাড়ির মতো। মাত্র তেরো বছর বয়সে তিনি মানুষের অধিকার আদায়ের নিমিত্তে মিছিল, মিটিং ও আন্দোলনসহ সর্বোপরি মানবতার জন্য কাজ করতে প্রবুদ্ধ করেছেন। একদিন আন্দোলন করার জন্য নিজেরাই স্কুলের ঘণ্টা পিটিয়ে ছুটি দিয়ে দেয়। এরপর সবাইকে নিয়ে আন্দোলনে নেমে পড়ে। কিন্তু এটুকু মেয়ে তখন রাজনীতির কি বুঝতেন? ছোটবেলা থেকেই বাবাকে দেখে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন। এটা বুঝেছেন মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানবতা-মানবিকতার জন্য নেমে পড়তে হবে। রাজনৈতিক ত্যাগ, সময়, জীবন-জনমের তোয়াক্কা না করে মানুষের উন্নতি ও মুক্তির চিন্তায় বিভোর থাকা রাজনীতির চরম ও পরম স্বার্থকতা এবং বরাবরের মতোই উদ্দেশ্যও বটে। আর তিনি এটা বুঝার পর শুধু রাজনীতি নিয়েই বসে থাকেননি। একজন স্ত্রী হিসেবে সংসার করেছেন, নিয়েছেন মাতৃত্বের স্বাদও। সংসার-স্বামীর জন্য এক সময় সন্তান ও ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে জার্মানিতে গমন করেন। সেই সময় স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে দেশের বাহিরে থাকায় প্রাণে বেঁচে আবারও রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছেন। তবুও তাকে দমনপীড়ন এমনকি হত্যা করার অপচেষ্টাও কম হয়নি।
সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে বাবার রেখে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজ করার দীপ্ত প্রত্যয় নিয়ে এদেশের মানুষের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য মাঠপর্যায়েও সব্যসাচী হয়ে কাজ চালিয়ে গেছেন সমানতালে। বর্তমান বিশ্বে দীর্ঘতম সময় নিয়োজিত নারী সরকার প্রধান। আর দেশের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায়। শেখ হাসিনার শাসনামলে মানব মনে-মুখে সবচে বেশি উচ্চারিত শব্দদ্বয় হলো 'জয় বাংলা ও উন্নয়ন'।
জয় বাংলা বর্তমানে দলীয় স্স্নোগান হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর সম্পর্ক স্বাধীনতা অর্জনের সঙ্গে। আর উন্নয়েনের সম্পর্ক শেখ হাসিনার সঙ্গে। দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও দলীয় পদ গ্রহণ করার মাধ্যমে রাজনীতিতে সরাসরি দলপ্রধান হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। তার দল ক্ষমতায় আসার পর সবচে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা তথা উগ্রবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমন করা। আর এই চ্যালেঞ্জ তিনি দারুণভাবে মোকাবিলা করে এরপর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করেছেন অবিরাম। পরিশেষে বাস্তবরূপদান করেছেন। পরবর্তী ধাপ হিসেবে দুই হাজার একচলিস্নশ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বন্ধুত্বপূর্ণ-সহযোগিতাসম্পূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপের ধকল সামাল দেওয়া, জ্বালানি সংকট মোকাবিলাসহ করোনাকালীন সমস্যা সামাল দিয়েছেন। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও কাজ করছেন সমানতালে। এর মধ্যে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল উলেস্নখযোগ্য। ভূমিহীন মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে বাড়ি ও আশ্রয়ণ প্রকল্প আবার স্বনির্ভরতার জন্য একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।
বিদু্যৎ ঘাটতির দেশ থেকে উঠে এসে সরাসরি পরমাণুবিদু্যৎ কেন্দ্র প্রতিস্থাপন করে বিদু্যৎ সরবরাহ করা, সমুদ্র জয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারীর ক্ষমতায়নকে শক্তিশালী করাসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মাধ্যমেও দেশকে উন্নত দেশের তালিকায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এ ছাড়াও নিজদেশের নেতৃত্বের দায়িত্ব নিয়েও বইতে হয়েছে অন্যদেশের বোঝা। বলছিলাম উড়ে এসে জুড়ে বসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কথা। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক বাস্তুচু্যত ১১ লাখ ঘরবাড়ি, ভূমি-দেশহারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মানবতার জয়গান নিয়ে 'মানবতার জননী' খেতাব অর্জনসহ নানাবিধ আন্তর্জাতিক সম্মাননা অর্জন তাকে বিশ্বসেরা নেতৃত্বের তালিকায় আলোকিত মুখ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনানুযায়ী কাজ করলে দেশ ও জাতির কল্যাণ আরও দ্রম্নত অগ্রসর হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এত এত কাজ করলেও তার প্রতি অভিযোগের যেন অন্ত নেই বিপরীত মহলের। তারা মনে করছেন, অবকাঠামোগত উন্নতি উন্নয়নের মাপকাঠি নয়। উন্নয়নের জন্য কিংবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুগ-জামানানুযায়ী টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন টেকসই উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা। পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থ পাচার, কঙ্কাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা, ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি ও দুর্নীতির লাগামকে শক্ত হস্তে দমন করা এবং সত্য-সুন্দর প্রতিষ্ঠায় অন্যায়ের সঙ্গে জিরো টলারেন্সনীতি অবলম্বন করার সাহসিকতা। এসব অভিযোগ-অভিমান, প্রতিঘাত-প্রতিবাদ, দাবি-দাওয়া আরও দ্রম্নত কার্যকর করতে পারলে সর্বমহলে শেখ হাসিনার গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। আর হাজারও মানুষ তাকিয়ে আছে এক স্বপ্নদ্রষ্টা আলোর মশাল হাতে নিয়ে নেতৃত্বের বোঝাকে মাথায় নেওয়া চিরচেনা নেত্রী শেখ হাসিনার দিকে। হয়তো তিনি পারবেন, এই বাঙালির বিশ্বাস, এই বাঙালির দাবি।
সাইফুর রহমান ফাহিম :প্রাবন্ধিক