বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মানব পাচার যথাযথ পদক্ষেপ নিন

  ০৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মানব পাচার যথাযথ পদক্ষেপ নিন

সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতা সত্ত্বেও মানব পাচার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। নানাভাবে মানব পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি তিউনিসিয়ার কাছে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে নিহত হয়েছেন ৯ জন। ৯ জনের মধ্যে ৮ জনই বাংলাদেশি। এর আগে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৪৯০ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। আটকদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও নেপাল, আফগানিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক রয়েছেন। এই ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বাংলাদেশ থেকে ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল, সাইপ্রাস, স্পেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, ইরাক ও লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের বেশি পাচার করা হয়। বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারকারীরা অন্তত ১৮টি রুট ব্যবহার করে। তারা বিভিন্ন দেশে বসে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।

জানা গেছে, দালাল ও তাদের সহযোগীদের বিদেশে লোক পাঠানোর বৈধ লাইসেন্স নেই। প্রশাসনের নজরদারি ও স্থানীয় মানুষের সচেতনতার অভাবে দালালরা বিদেশে পাঠানোর নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ইউরোপের কোনো কোনো দেশে পাঠাতে একেকজনের কাছে থেকে নেওয়া হয় ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রধান টার্গেট এলাকার বেকার যুবক। টাকা নিয়ে প্রথমে তাদের ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠানো হয়। সেখানে দালাল চক্রের আরেক গ্রম্নপ তাদের দু-তিন দিন দুবাইয়ে রাখে। সেখান থেকে চার্টার্ড বিমানে পাঠানো হয় লিবিয়ায়। সুবিধামতো সময়ে দালালরা নৌকা বা ট্রলারে করে তাদের ইতালির উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়। ভাগ্যক্রমে দুই-একজন ইতালিতে যেতে পারলেও বেশির ভাগই সাগরে নিখোঁজ হন বা মারা যান। এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দালাল ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে, এর পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে।

মনে রাখতে হবে, মানব পাচার বাংলাদেশের অন্যতম শিরঃপীড়ায় পরিণত হয়েছে। জল-স্থল-আকাশপথে প্রতিদিন মানব পাচার চলছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। এসব মানুষের বেশির ভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাপথে মারা যাচ্ছে। এমন মরীচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে সাগর পথে বিদেশে পাড়ি জামাতে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছে লোকজন। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মানব পাচারের শিকার হওয়ার পর বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাচারকারীরা তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে।

আমরা মনে করি, মানব পাচার ঠেকাতে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ পদক্ষেপ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে পাচারকারীদের শনাক্ত ও অভিযান পরিচালনা করতে হবে। মানব পাচার বন্ধ করতে সরকারের মনোযোগ ও পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে