ডলার সংকটকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের উদ্বেগের বিষয় সামনে এসেছে বারবার। ফলে যদি চলমান ডলার সংকটের মধ্যে আশা জাগায় বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রম্নতি তবে তা স্বাভাবিকভাবেই ইতিবাচক। জানা যাচ্ছে, একদিকে ডলার সংকটের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রম্নতি; অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রম্নতি বাড়ার পাশাপাশি নতুন ঋণ চুক্তির জন্য পাইপলাইনে অপেক্ষায় রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে এসব প্রতিশ্রম্নতি পাওয়া গেছে বলেও জানা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
তথ্য মতে, ইতোমধ্যে ৮টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ চুক্তির জন্য পাইপলাইনে রয়েছে। এর পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর ঋণ প্রতিশ্রম্নতিও বেড়েছে ৩০৬.১ শতাংশ। আমরা মনে করি, যখন বিষয়গুলো সামনে আসছে তখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে আমলে নেওয়া দরকার, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে অর্থছাড় পিছিয়ে যায়। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে এটাও মনে রাখা জরুরি যে, এর আগে নানা সময়ে প্রকল্পে ধীরগতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ সামনে এসেছে। আর প্রকল্পে ধীরগতির কারণে অর্থব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের সংকটও তৈরি হয়। ফলে অর্থনীতিবিদদের মতো আমলে নিতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
উলেস্নখ্য, ইআরডির তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বৈদেশিক অর্থছাড় হয়েছে ৪৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। যেখানে একই অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এসেছিল ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। সেই হিসেবে শুধু জানুয়ারিতে দাতা সংস্থাগুলো অর্থছাড় করেছে ৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর যখন জানা যাচ্ছে যে, গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে অর্থসহায়তার প্রতিশ্রম্নতি বাড়াচ্ছে দাতা সংস্থাগুলো তখন এটি আমলে নিতে হবে এবং যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
ইআরডির তথ্যমতে, জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি পাওয়া গেছে ৭১৭ কোটি ২১ লাখ ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময় প্রতিশ্রম্নতি ছিল মাত্র ১৭৬ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের ব্যবধানে প্রতিশ্রম্নতি বেড়েছে ৫৪০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। আমরা মনে করি, যেভাবে প্রতিশ্রম্নতি বেড়েছে, এটিকে কাজে লাগাতে হবে, প্রকল্পের গতি বাড়ানোসহ সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রম্নতি পাওয়া গেছে এডিবির পক্ষ থেকে। সংস্থাটি ২৬২ কোটি দুই লাখ ডলারের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। প্রতিশ্রম্নতির পাশাপাশি অর্থছাড়েও এগিয়ে এডিবি। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১২৪ কোটি ১১ লাখ ডলার অর্থছাড় করেছে সংস্থাটি। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জাপানের কাছ থেকে প্রতিশ্রম্নতি পাওয়া গেছে ২০২ কোটি ৬ লাখ ডলার। এছাড়া বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ১৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রম্নতি। যদিও অর্থছাড় করলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও চীন, ভারত ও রাশিয়া থেকে কোনো প্রতিশ্রম্নতি পাওয়া যায়নি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, চলমান ডলার সংকটের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রম্নতি এটি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে খরচ না হলে অর্থ ছাড় করে না দাতা দেশ বা সংস্থাগুলো এটিও এড়ানো যাবে না। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের হার আরও বাড়াতে হবে। যে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরাও। কেননা, অনেক প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তা বাড়ছে। কিন্তু তা খরচ করা যাচ্ছে না। পাইপলাইনে তাই প্রতিদিনই জমছে বিপুল পরিমাণ প্রতিশ্রম্নত সহায়তার অর্থ। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি।