সীমান্তে আতঙ্ক কাটেনি সতর্ক থাকা জরুরি
প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
সীমান্তে আতঙ্ক সৃষ্টি হলে তা সন্দেহাতীতভাবে উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে আবারও সীমান্তে আতঙ্কের বিষয়টি সামনে এসেছে। জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তে নাফ নদীর ওপারে দেশটির মংডু শহরে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। মর্টার শেল ও গুলির শব্দে এপারের মানুষের মধ্যে অজানা আতঙ্ক ভর করেছে। বৃদ্ধি করা হয়েছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল।
আমরা মনে করি, সীমান্তে যে আতঙ্ক সৃষ্ট হয়েছে সেটি আমলে নিতে হবে এবং সতর্কতাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। বলা দরকার, এর আগে এটাও সামনে এসেছিল যে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে জ্বালানি, ভোজ্যতেল, ওষুধ ও খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে এই বিষয়গুলোও আমলে নিতে হবে। অন্যদিকে, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অসাধু ব্যবসায়ী ও সংঘবদ্ধ একটি চক্র টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে পণ্য পাচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে- এর আগে এমন তথ্যও সামনে এসেছিল। এই বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপও অব্যাহত রাখতে হবে।
জানা যায়, মিয়ানমারের দেশটির মংডু শহরটির উত্তর ও দক্ষিণের কয়েকটি গ্রামে সংঘাত চলছে। এ কারণে নাফ নদীর এপারে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, টেকনাফ পৌর শহর, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নে গুলি ও মর্টারশেলের শব্দ শোনা গেছে। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ্য যে, রাতে গোলার শব্দ পাওয়া গেছে উলেস্নখ করে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, রাতে সীমান্তের ওপার মিয়ানমার থেকে থেমে থেমে ভারী মর্টারশেলের শব্দ শুনতে পান। এসব গোলার শব্দ এখন নিয়মিত ঘটনার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে, হ্নীলা সীমান্তের বসবাসকারী একজনের বক্তব্য, রাতভর থেমে থেমে মিয়ানমারের ভারী গোলার শব্দ তার বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে। মাঝে মধ্যে ভারী শব্দের ভয়ে ঘুম ভেঙে যায়।
আমরা বলতে চাই, একদিকে গোলাগুলির শব্দ অন্যদিকে সীমান্তে আতঙ্ক- ফলে এটাও আমলে নিতে হবে যে, এরকম পরিস্থিতিতে সীমান্ত দিয়ে যাতে নতুন করে অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আমরা বলতে চাই, যখন এখনো আতঙ্কা কাটেনি তখন পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে।
উলেস্নখ্য নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘর্ষ চলছে। এতে টেকনাফের হোয়াইক্যং উত্তরপাড়া, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, হ্নীলা মৌলভিপাড়া, ওয়াব্রাং, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া এলাকায় সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গুলি ও মর্টার শেলের শব্দ পাওয়া গেছে। এছাড়া জানা যায়, হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্তের পূর্ব দিকে মিয়ানমারের কুমিরহালি, নাইচদং, কোয়াংচিগং, শিলখালী, নাফপুরা গ্রামে গৃহযুদ্ধ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা টহল বৃদ্ধি করেছেন। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি। এছাড়া স্মর্তব্য, এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল যে, রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে- এটাকেও এড়ানো যাবে না। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যেমন উদ্যোগ জারি রাখতে হবে, তেমনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইসু্যর কোনো গ্রহণযোগ্য বা দৃশ্যত সমাধান হয়নি- যা উদ্বেগের। ফলে মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি বা যে কোনো কারণেই হোক অনুপ্রবেশের ঘটনা যেন না ঘটে- সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।