বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রবাসী আয়

বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন
  ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
প্রবাসী আয়

বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়। কিন্তু যদি প্রবাসী আয় সংক্রান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক- যা আমলে নেওয়া জরুরি।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, ডলারের দর বাজারভিত্তিক না হওয়ায় এখনো হুন্ডিকে বেছে নিচ্ছে প্রবাসীরা। আর এই সুযোগ নিচ্ছে দেশি-বিদেশি অর্থ পাচারকারী একটি চক্র। যে কারণে ২০২৩ সালে দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি করেও প্রবাসী আয় বাড়েনি। এজন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার বিকল্প নেই।

আমরা মনে করি, যখন এটা সামনে আসছে, ডলারের দর বাজারভিত্তিক না হওয়ায় এখনো হুন্ডিকে বেছে নিচ্ছে প্রবাসীরা, আবার এই সুযোগ নিচ্ছে অর্থ পাচারকারী চক্র; তখন পরিস্থিতি কতটা উৎকণ্ঠার তা আমলে নেওয়া জরুরি। আর বিশেষজ্ঞদের মতো বিবেচনায় নিয়ে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার বিষয়টিও এড়ানো যাবে না। মনে রাখা দরকার, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফলে দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি করেও প্রবাসী আয় বাড়বে না, হুন্ডি খেয়ে ফেলবে প্রবাসী আয়- এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা।

এটাও বলা দরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রাসীদের রেমিট্যান্স নিয়ে দেশে-বিদেশে একটি চক্র অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। ওই চক্রটি বিভিন্নভাবে খোলাবাজারের ডলার বেশি দর নিচ্ছে। অন্যদিকে, যখন হুন্ডির এই চক্রটি এতই সংঘবদ্ধ তাদের শনাক্ত করা কঠিন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক- তখন সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি।

লক্ষণীয়, একদিকে হুন্ডি সংক্রান্ত সৃষ্ট পরিস্থিতি উদ্বেগের। অন্যদিকে, প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স আহরণের উদ্যোগ একেবারেই কাজে আসেনি বলে জানা যাচ্ছে। কেননা, ২০২৩ সালে দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ জনশক্তি রপ্তানির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। অথচ ওই বছরে সেভাবে বাড়েনি প্রবাসী আয়। গত দুই বছরে প্রবাসী আয় কমেছে বলেও জানা যাচ্ছে। ফলে সর্বাত্মক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে করণীয় নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। বৈধ পথে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স যেন পাঠায় সেটিকে সামনে রেখেও কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

উলেস্নখ্য, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বু্যরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, গত বছর বিশ্বের ১৩৭টি দেশে বাংলাদেশের ১৩ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার। তবে জনশক্তি রপ্তানিতে মাইলফলক অর্জন সত্ত্বেও সে অনুযায়ী বাড়েনি রেমিট্যান্স প্রবাহ। এছাড়া, ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১৯২ কোটি বা ২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। আগের বছর যা ছিল ২ হাজার ১২৯ কোটি ২১.২৯ বিলিয়ন ডলার। জানা যাচ্ছে, গত দুই বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে স্থবির হয়ে আছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, হুন্ডির প্রভাব সব সময়ই ছিল। কিন্তু ডলারের বাজারের অস্থিরতার কারণে কয়েক বছর ধরে তা আরও বেড়ে গেছে। ফলে এটি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা, যখন জানা যাচ্ছে যে, এই রেমিট্যান্স কমার কারণেই মূলত দেশের রিজার্ভ কমে আসছে। এছাড়া লক্ষণীয়, ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থাৎ বৈধ পথে টাকা পাঠালে সরকার প্রথমে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিত। এখন তা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্সের ধারা ইতিবাচক করা যায়নি। এরপর ব্যাংকগুলোকে আরও ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবুও কমছে না হুন্ডি। ফলে হুন্ডি পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। আর যখন এমন মতামত আলোচনায় আসছে যে, হুন্ডি বন্ধ করতে হলে ডলারের বাজারকে স্থিতিশীল করতে হবে। কার্ব মার্কেট ও ব্যাংকের ডলারের দামের পার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে- তখন এটিও আমলে নেওয়া সমীচীন। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে রেমিট্যান্স বাড়াতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে