রাজধানীর ৯০ শতাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ
কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি
প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
নানা অব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবনে ঠাসা ঢাকাকে মৃতু্যপুরী, আতঙ্কের শহর, ঝুঁকিপূর্ণ নগরী, জীবন্ত বোমার অলিগলিসহ নানা নামেই আখ্যা দেয়া হয়েছে অতীতে। এর জন্য নিমতলী, চুড়িহাট্টা, এফআর টাওয়ার, আরমানিটোলা, নিউমার্কেট, মগবাজার বিস্ফোরণ, গুলিস্তান ট্র্যাজেডিসহ একের পর এক হৃদয় বিদারক ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে রাজধানীর বাসিন্দাদের। সবশেষ এই তালিকায় যুক্ত হলো বেইলি রোড ট্র্যাজেডি। সেখানে ঝরেছে অন্তত ৪৬ প্রাণ। এসব ট্র্যাজেডির পর সংশ্লিষ্ট সবারই উচ্চকণ্ঠে শোনা গেছে ঝুঁকিমুক্ত শহর গড়ার প্রতিশ্রম্নতি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আড়ালে চলে গেছে প্রতিটি ঘটনা। নতুন করে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আবার শুরু হয় আশার বাণী শোনানোর প্রতিযোগিতা।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে বারবার সতর্ক করা হয়েছে ভবন মালিকদের। কিন্তু চিঠি দেওয়ার পরেও কেন অগ্নি ঝুঁকিমুক্ত করা গেল না ভবনটিকে, সেই প্রশ্নের উত্তর যেন কারো কাছেই নেই। রাজধানীতে কতটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ সে বিষয়ে সঠিক কোনো সমীক্ষা নেই কোনো সংস্থার কাছে। রাজউক থেকে বলা হয়, প্রতি বছর নতুন যে ভবনগুলো নির্মাণ করা হয় তার বেশির ভাগই 'বিল্ডিং কোড' মানা হয় না।
ফায়ার সার্ভিসের চালানো একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, রাজধানীর ৯০ শতাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৩ শতাংশ ভবন। বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ব্যানার টানাতেও দেখা গেছে ফায়ার সার্ভিসকে। তাতেও টনক নড়েনি কারো। মালিকরাও গুরুত্ব দিচ্ছেন না ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া চিঠিকে। আমরা মনে করি, অপ্রশস্ত রাস্তা, কেমিক্যাল গুদাম, অপরিকল্পিত ভবনের কারণে সব সময় ঢাকা ঝুঁকিতে থাকে। ঝুঁকিমুক্ত হতে হলে সবার আগে ঢাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাশাপাশি বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ, রাস্তা প্রশস্ত করা, আধুনিক গ্যাস লাইন ব্যবস্থা, ডিটেইল এরিয়া পস্ন্যান (ড্যাপ) অনুযায়ী ঢাকা পুনর্গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রত্যেক ভবনে বসবাসের জন্য নবায়নযোগ্য সার্টিফিকেট ব্যবস্থা চালু করতে হবে। নিজের বাড়ি ও প্রতিবেশীর বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাসিন্দাদের উদ্যোগী হতে হবে। প্রতিটি ঘটনার পেছনে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বলেন, আমরা বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমে মানুষকে ঝুঁকিরোধে উদ্বুদ্ধ করে থাকি। কিন্তু মানুষ তার নিরাপত্তার বিষয়ে যেসব সরঞ্জাম কেনা দরকার এবং ভবনে যেসব সুবিধা রাখা দরকার সেগুলোকে বিশাল লোকসান বলে ধরে নেয়। ফলে আমাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম সফল হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। যেমন বেইলি রোডের ওই ভবন মালিককে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ৩ বার চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। তবুও তারা অগ্নিঝুঁকি কমানোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
এটা সত্য ভবন নির্মাণে আইন মানা হচ্ছে না। আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া অকার্যকর হয়ে পড়েছে। আর এ কারণেই বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।