পাঠক মত

বাঁশখালীর লক্ষাধিক লোকের চলাচলের রাস্তার বেহাল দশা

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

এস.এম. ফরিদুল আলম বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর দুটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক জনসাধারণের চলাচলের রাস্তার একেবারে বেহাল দশা। দ্বিমুখী বঙ্গোপসাগর ও শংখ নদীবেষ্টিত উপকূলীয় এলাকা খ্যাত বাঁশখালীর খানখানাবাদ ও সাধনপুর ইউনিয়নের জারজীর্ণ রাস্তাটি জনদুর্ভোগ কমাতে জরুরিভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন। এই ইউনিয়নদ্বয়ের লক্ষাধিক মানুষের যাত্রাপথের মধ্যে খানখানাবাদের প্রেমাশিয়া নয়াহাট থেকে সাধনপুর বাণীগ্রাম রাস্তার মাথা পর্যন্ত রাস্তাটির প্রায় ৪ কি. মি.। জরাজীর্ণ এই রাস্তায় প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম শহর, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, রামদাশ মুন্সীর হাট, উপজেলা সদর হাসপাতালে কোমলমতি শিক্ষার্থী, পথচারী, মুমূর্ষু ও ডেলিভারী রোগী যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। বিশেষ করে, রাস্তাটিতে বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান হওয়ায় প্রতিনিয়ত হাজার হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করতে হচ্ছে। রাস্তাটির সাধনপুরের কিছু অংশে পিচ উঠে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল ও পথচারীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। আবার ঈশ্বরবাবুর হাট থেকে প্রেমাশিয়া নয়াহাট পর্যন্ত ভঙ্গুর রাস্তায় পথচারী সর্বোপরি রোগী ও ডেলিভারী রোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। অন্যদিকে খানখানাবাদ ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী অপরাপর ইউনিয়নগুলো পর্যটন এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এত অবহেলিত জনপদে পরিণত, তা ভাষায় প্রকাশ করা দুষ্কর। খানখানাবাদের এই জনপদ এক সময় মৎস্যসম্পদ আহরণ, ধান, তরমুজ উৎপাদনের জন্য সারাদেশে প্রসিদ্ধ ছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ১৯৯১ সলের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ার পর কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর অবহেলার কারণে ক্রমশ চরম ঝুঁকিপূর্ণ, অবহেলিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় নদী ভাঙনকবলিত জনপদে পরিণত হয়। এরপরও ইউনিয়ন দুটিতে অসংখ্য মসজিদ, এবাদতখানা, ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, একাধিক দাখিল ও সিনিয়র মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসা, একাধিক হেফজখানা, ৮-১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি উচ্চ বিদ্যালয়, ৮-৯টি সাইক্লোন শেল্টার, ১০-১২ কবরস্থান, ৭-৮টি শ্মশান এবং ৫-৬টি মন্দির রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে কোনো রোগী শহর কিংবা ১৬ কি. মি. দূরে অবস্থিত জলদি উপজেলা হাসপাতালে নিতে হলে রোগীকে দোলনায় বহন করে নিতে হয়। এ ছাড়া প্রেমাশিয়া, ডোংরা ও কদমরসুলসহ তৎসংলগ্ন অপরাপর গ্রামগুলোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ দিলে যাতায়াত সমস্যার কারণে তারা বেশি দিন এলাকাতে থাকতে চায় না। যারা দূর-দূরান্ত থেকে গিয়ে চাকরি করে, তারাও নিয়মিত ক্লাস করে না। এতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানে চরম বিঘ্ন ঘটছে। শুধু তাই নয়, তিন নম্বর ইউনিয়নে চারটি সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত চিকিৎসকরাও জরুরি চিকিৎসা দিতে দায়িত্ব পালনে অপারগ হতে বাধ্য হয়। অপরদিকে প্রেমাশিয়ার আশপাশে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় এবং যাতায়াতের ভোগান্তির কারণে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অকালে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়ছে। তেমনি শিক্ষা প্রবৃদ্ধির হারও আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। অত্র এলাকার জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের মূলে রয়েছে রাস্তার অনুন্নতাই দায়ী। সড়কের অনুন্নতার কারণে উপরোক্ত এলাকার প্রায় লক্ষাধিক জনগণ যুগ যুগ ধরে অসভ্যতার তিমির অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও যন্ত্রণার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে বাণীগ্রাম রাস্তার মাথা থেকে চৌধুরীঘাট পর্যন্ত ৪ কি. মি. এবং ঈশ্বরবাবুর হাট হতে প্রেমাশিয়া নয়াহাট পর্যন্ত প্রায় ২ কি.মি. বিধ্বস্ত রাস্তাটি সংস্কারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই, এমনকি স্থানীয় প্রশাসনের কোনো তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে বর্ষার পূর্বে জরুরিভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন বলে এলাকাবাসী মনে করেন। স্বাধীনতাত্তোর ৫২ বছরেও খানখানাবাদ ইউনিয়নে রাস্তাঘাটের যথাযথ উন্নয়ন না হওয়ায় বৈষম্যজনিত ও বিমাতাসুলভ কারণই মনে করেন এলাকাবাসী। অথচ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে পার্শ্ববর্তী আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন গহিরা গ্রামের ন্যায় উপযুক্ত হলেও সরকারের সুনজরে দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তাদের সুদৃষ্টি আকর্ষণে আমরা ব্যর্থ। অবিলম্বে উক্ত এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি বিশেষ বিবেচনায় জরুরিভিত্তিতে সংস্কারের জন্য স্থানীয় নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমীপে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।