পৃথিবীতে নানা ধর্মের, জাতের, বর্ণের আর গোত্রের মানুষ বসবাস করে। কেউ খাটো আবার কেউ লম্বা। কারও মুখ গোলগাল আবার কারওটা লম্বাটে। কারও নাক খাড়া আবার কারওটা বোঁচা। এতে কী হয়েছে? আমরা আখেরে সবাই মানুষজাতি।
দুই হাত, দুই পা, এক মুখমন্ডল আর অদৃশ্য আত্মায় ভর করে মানুষ জন্মে আর মৃতু্যবরণ করে। তবে মানুষের মধ্যে ষড়রিপুর তাড়না কাজ করে খুব। ভালো-মন্দ চেনা-জানা আবার জেনেও ভুল করা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। যার ফলে মানুষ নিজের সৃষ্টিকেও ভালো-খারাপ পথে নিয়ে যায় অনায়াসে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মানুষ দ্বারাই সৃজিত। স্রষ্টার সৃষ্টি আকাশ এবং বায়ু তরঙ্গ ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক তৈরি করে মানুষ আজ বিশ্বকে হাতের মুঠোয় দেখতে পাচ্ছে। যা ঘটনা ঘটে বা ঘটবে বলে অহেতুক অনুমানসিদ্ধ হয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিচ্ছে, অশ্লীলতায় ভরপুর নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর ঘরোয়া টোটকা কথাবার্তাগুলোও যেন আজ সবার জন্য উন্মুক্ত বাজার কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুশতাক-তিশার গল্প শুনে আপনি কী জীবনে শিক্ষা নেবেন? কিংবা লায়লা- মামুনের কাহিনী দেখে আপনি কি সার্জারি আর চুল কালার করে স্টার হবেন? একে কি স্টার হওয়া বলে সত্যিকার অর্থে? এখন হয়ত বলবেন, স্যোসাল মিডিয়া পেইজের পারফরম্যান্স দিয়ে অর্থ ইনকাম করা যাচ্ছে। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, এটা কতটা হালাল ইনকাম? কী করে নিজেকে ধ্বংসের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে মানুষ নেটওয়ার্কিং টাকা পাওয়ার লোভে পড়ে, তা সে নিজেও জানে না।
আপনি নিজের মতো নিজে থাকুন না, এতে আপনি আর কিছু না হোক মনের শান্তিটুকু নিয়ে বাঁচতে পারবেন। কেউ কারও মতো হতেই পারে না এই পৃথিবীতে। কিন্তু ভালো অভ্যাস চর্চা করলে একজন সৃজনশীল অনন্য মানুষ হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রতিষ্ঠায় তুষ্ট করা যায়। প্রতিষ্ঠা মানে এই নয় যে, বড় চাকুরে কিংবা ব্যবসায়ী হতে হবে। জীবনকে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখতে, জানা-বুঝার মতো, জীবনে ভালো রুচিসম্মত কিছু একটা করে চলার মতো পড়ালেখা করে, তিনবেলা খেয়ে, পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ ঘরে আরামে ঘুমাতে পারলেই জীবনে এর চেয়ে বেশি কিছু দরকার হয় না।
একটি সুস্থ মন ও শরীর সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ, খোদার দয়া। কেন অযথা আমরা সারাদিন রাত না ঘুমিয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় প্যাড়া বাড়াব? কী লাভ এতে। নিজের শরীর, মন আর অর্থ অপচয় করে? এমবি প্যাকেজ, বান্ডেল টাকা ছাড়া ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক এনড্রয়েড মোবাইল কিংবা কম্পিউটার চালানো যায় না।
কথা বলা যোগাযোগের জন্য মোবাইল দরকার, যা সামান্য অর্থে মেটানো যায়। কিন্তু নানা ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক অনুষ্ঠান, নাচানাচি, লাফালাফি, গাল গল্প এবং বাজে অডিও ভিডিও দেখা বা শোনার জন্য আমরা এখন মরিয়া। তবে ভালো অনেক কিছু ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে পাওয়া যায়, যা পড়ে বা দেখে জীবনকে বদলে দেয়া যায় নিমিষেই। এতে অর্থবহ চিন্তারও উদয় হয়। কিন্তু এসব ভালো বার্তা দেখে বা শুনে হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র। সময় যেন কাটেই না আমাদের মোবাইল নেট ছাড়া। এটাকে মাসিক অর্থ ব্যয়ের আওতায় আনা উচিত। যা আমাদের এখন ভাববার সময় এসেছে। চিন্তা করে দেখেন, আমাদের কাড়ি কাড়ি অর্থ জীবনের জন্য খুব একটা প্রয়োজন নেই, এমন জায়গায় নেটের জগতে আমরা অপচয় করছি অহরহ বর্তমান সময়।
কিছু মানুষ কাজকর্ম ফেলে দেখা যায়, সারাক্ষণই অনলাইনে পড়ে থাকে। আর যা মন চায়, অহেতুক পোস্ট করে সরব থাকে, নেটের জগত মাতিয়ে রাখার চেষ্টা করে। প্রকৃতপক্ষে একজন জ্ঞানী বুঝদার মানুষের কর্ম হওয়া উচিত ঠিক যেটুকু দরকার, সেটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকা। তাহলে জীবনে পিছলে যাওয়ার ভয় থাকে না। আসুন নৈতিক জ্ঞান নিয়ে চলি, নিজের মতো নিজেকে ভালো রাখি। ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক আসক্তি থেকে নিজেদের বাঁচাই।