ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে এমনটি যখন জানা যাচ্ছে, তখন তা ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের 'নতুন অধ্যায়' শুরু করতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, 'সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারাও চায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় এবং আমরাও চাই একটি নতুন সম্পর্ক, একটি সম্পর্কের নতুন অধ্যায় তাদের সঙ্গে শুরু করতে। যেহেতু দু'দেশেরই সদিচ্ছা আছে- সুতরাং, এই সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, গভীরতর ও উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের উভয় দেশ উপকৃত হবে।' এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোববার বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব বিষয় জানিয়েছেন। ওইদিন বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ সহকারী ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এইলিন লাউবাখেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়।
বলা দরকার যে, আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রথম সফর। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনার পর পৃথকভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং এইলিন লাউবাখের। উলেস্নখ্য, আলোচনায়র্ যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, মিয়ানমারে যুদ্ধ, রোহিঙ্গা সংকট, গাজা ও ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার বিষয়টি জানা যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা কীভাবে আমাদের সম্পর্কটাকে আরও গভীরতর করতে পারি এবং সম্পর্কের নতুন যুগ কীভাবে শক্তিশালী করতে পারি, সে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেখানে তারাও আমাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক, আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায় এবং সেই সম্পর্ক উন্নয়ন করার লক্ষ্যেই কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন এবং সেই চিঠিতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় করার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন- এমনটিও উলেস্নখ করেন।
আমরা বলতে চাই, যে বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে তা ফলপ্রসূ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক। এছাড়া বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হোক এমনটিও কাম্য। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি বৃদ্ধিসহ বাজার সম্প্রসারণ হোক- আর এই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। জানা গেছে যে, ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভোগান্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, 'গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন। এছাড়া, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যে আজকে আমাদের সবাইকে ভোগাচ্ছে এবং কোভিড মহামারির পর এই যুদ্ধ হঠাৎ করে বেঁধে যাওয়া, সেটি আমাদের জন্য, সবার জন্য একটি হতাশার বিষয় ছিল; এই বিষয়গুলো আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন। জানা যাচ্ছে যে, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, 'তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি যে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে তারা ক্রমাগতভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে এবং রোহিঙ্গাদের এখানে যে আশ্রয় দিয়েছি, সেক্ষেত্রে তারা নানাভাবে সহায়তা করছে। সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।' অন্যদিকে, যখন জানা যাচ্ছে- রোহিঙ্গারা সসম্মানে, সব ধরনের অধিকারসহ মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াই যে একমাত্র সমাধান, এটির ব্যাপারে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র একমত, তখন বিষয়টি ইতিবাচক। নিরাপত্তা ইসু্যতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হওয়ার বিষয়টিও সামনে এসেছে। এছাড়া মাইক্রোবস্নগিং সাইট এক্স-এ এক পোস্টে আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, 'সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি, কীভাবে আমাদের দু'দেশ পারস্পরিক স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা, শরণার্থী, জলবায়ু, শ্রম ও বাণিজ্য। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।' ফলে পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা করে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুসংহত হোক এবং অগ্রগতি নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।
সামগ্রিকভাবে আমরা বলতে চাই, ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো, তা ফলপ্রসূ হোক আর সেই লক্ষ্যে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি প্রত্যাশিত।