পরিবর্তনশীল আবহাওয়া ও ভোজ্যতেল উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ
বিশ্ববাজারে ও দেশের অভ্যন্তরে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার ফলে দিন দিন বাড়ছে সরিষার তেলের চাহিদা। একই সঙ্গে দাম ভালো পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। এছাড়া স্বল্পসময়ে চাষযোগ্য, উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় সাথী ফসল হিসেবে জমিতে সরিষা উৎপাদনে ঝুঁকেছেন চাষিরা।
প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ড. মো. মাহমুদুল হাসান খান
হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো মাঠ। যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। ফুলে ফুলে এই সমারোহ দু-চোখ জুড়িয়ে দেয়। এ যেন সৌন্দর্যের লীলাভূমি। প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সৌন্দর্যের নান্দনিক রূপে। প্রকৃতির এই রূপের রূপকার সরিষা। সরিষাকে বলা হয় সুযোগ সন্ধানী শস্য। কখনো বা বলা হয়, দুই মৌসুমের ধান চাষের মেলবন্ধন রচনাকারী শস্য। আমন ধানের জমিতে ধানকাটার দুই সপ্তাহ আগে জমিতে সরিষার দানা ছিটিয়ে দেওয়া যায়। ধান কাটতে কাটতেই অংকুরোদগম হয় সরিষা বীজের। সরিষার জীবনচক্রে সময়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার করা যায়। ১০০ থেকে ১১০ দিনের মাথায় সরিষা ঘরে ওঠে। এরপর এ জমিতে আবাদ হয় বোরো ধান। এ শস্যের উৎপাদন খরচ খুবই কম। সরিষা আবাদে জমি চাষের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় না তেমন কোনো সেচ। আগাছা কম থাকায় নিড়ানির প্রয়োজন নেই। সারের ব্যবহারও কম। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনপদ ঝালকাঠি উচ্চফলনশীল এবং স্বাস্থ্যকর তেলের উৎস হিসেবে পরিচিত বারি সরিষা-১৮ জাতের চাষের সূচনা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এ সরিষা চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা মো. দুলাল হাওলাদার। জেলার সদর উপজেলার তার নেতৃত্বে এলাকার ১০ থেকে ১২ জনের একদল চাষি ড. মো. মাহমুদুল হাসান খান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বরিশালের দিক-নির্দেশনায় বারি-১৮ জাতের উচ্চফলনশীল সরিষা চাষে আগ্রহী হন। তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় বলা হয়েছে, বারি-১৮ বিঘাপ্রতি ফলন সাড়ে আট থেকে নয় মণ। তাই প্রচলিত সরিষার চেয়ে তেলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় অন্তত ২ শতাংশ। প্রচলিত সরিষার ইউরেসিক এসিডের হার আড়াই শতাংশের ওপরে থাকায় অনেকে ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষাকে পরিহার করেন। কিন্তু বারি-১৮ জাতের সরিষার তেলে ইউরেসিক এসিডের হার পয়েন্ট ৫ শতাংশের নিচে। এ কারণে এ তেল স্বাস্থ্যসম্মত। ফ্যাটি এসিডের হার কম থাকায় হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপের জন্যে মোটেই ক্ষতিকর নয়। এ সরিষা জাতকে সম্প্রসারিত করতে পারলে দেশে উপকারী ভোজ্যতেলের অপার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তৈরি হবে। তেল আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের ক্ষেত্র হবে সংকুচিত।
বিশ্ববাজারে ও দেশের অভ্যন্তরে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার ফলে দিন দিন বাড়ছে সরিষার তেলের চাহিদা। একই সঙ্গে দাম ভালো পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। এছাড়া স্বল্পসময়ে চাষযোগ্য, উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় সাথী ফসল হিসেবে জমিতে সরিষা উৎপাদনে ঝুঁকেছেন চাষিরা।
'তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প'র মাধ্যমে জুন ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৪০ ভাগ ভোজ্যতেল স্থানীয়ভাবেই উৎপাদনের কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ হেক্টর জমিতে তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন হচ্ছে, যার বেশির ভাগই সরিষা। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস তথা দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়ে চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণে প্রয়োজন প্রায় ২৪ লাখ হেক্টর জমি তেলজাতীয় ফসল বিশেষ করে সরিষাকে প্রাধান্য দিয়ে আবাদের আওতায় আনা প্রয়োজন। বাংলাদেশে ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষাই প্রধান। এমতাবস্থায় ভোজ্যতেলের আমদানি-নির্ভরতা কমাতে দেশে সরিষার চাষের আওতায় জমির পরিমাণ বাড়ানো, উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা অন্তর্ভুক্তিই একমাত্র উপায়। উলেস্নখ্য, ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার তেলে সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ ৩০ শতাংশের নিচে ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ ৫০ শতাংশের ওপরে এবং ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬-এর অনুপাত ১:২ বিদ্যমান, যা পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত।
বাংলাদেশে আবাদ করা তেলবীজ আবাদি জমির প্রায় ৬০ শতাংশ সরিষার আওতায় এবং কমবেশি সব জেলাতেই সরিষার চাষ হয়। ডিএই সূত্রে জানা যায়, দেশে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদে উৎপাদিত সরিষার পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৩৫ লাখ টন এবং গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের সরিষার আওতায় জমির পরিমাণ বাড়ে প্রায় ২ লাখ হেক্টর। ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষা তেলের চাহিদা বৃদ্ধি, অনুকূল আবহাওয়া, সরিষা আবাদে কৃষকের সচেতনতা বৃদ্ধি ও উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা কৃষকপর্যায়ে সম্প্রসারিত হওয়ায় চলতি অর্থবছরে সরিষার উৎপাদনও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বৃদ্ধির কারণ। সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক 'তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প'র আওতায় জুন ২০২৫ সালের মধ্যে প্রত্যাশার অনুকূলে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ দেশীয় উৎপাদন দিয়ে মেটানো সম্ভব হবে। ভোজ্যতেলের আমদানি-নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশে তেলজাতীয় ফসল সরিষা চাষের আওতায় জমির পরিমাণ বৃদ্ধিসহ উচ্চফলনশীল জাতের দ্রম্নত সম্প্রসারণ ও উৎপাদন কলাকৌশলে আধুনিক পদ্ধতির অনুসরণই একমাত্র উপায়।
বাংলাদেশে তৈলবীজ ফসল উৎপাদনে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তৈলবীজ ফসলের উৎপাদন চাহিদার মাত্র এক তৃতীয়াংশ। ভোজ্যতেল তথা তৈলবীজের চাহিদা পূরণের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশে সরিষা, তিল, চীনাবাদাম, সয়াবীন ও সূর্যমুখী প্রধান তৈলবীজ ফসল। অদ্যাবধি বিএআরআই কর্তৃক সরিষার ২০টি, চীনা বাদামের ১২টি, তিলের ছয়টি, সয়াবিনের সাতটি, সূর্যমুখীর তিনটি, তিসির দুটি, গর্জন তিল এবং কুসুম ফুলের একটি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। বিশেষায়িত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত সরিষার জাতের মধ্যে বারি সরিষা-৯, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫ এবং বারি সরিষা-১৭ (ব্রাসিকা রাপা) উচ্চফলনশীল (১.৪ থেকে ১.৮ টন/হেক্টর), স্বল্পমেয়াদি (৮০ থেকে ৮৫ দিন) এবং রোপা আমন-সরিষা-বোরো ধান শস্য বিন্যাসের জন্য উপযোগী। অধিকন্তু বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫ এবং বারি সরিষা-১৭ এর বীজের বর্ণ হলুদ হওয়াতে তেলের পরিমাণ বাদামি বর্ণের সরিষার তুলনায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ বেশি থাকে। ২০১৮ সালে উদ্ভাবিত জাত বারি সরিষা-১৮ এর গড় ফলন ২.০ থেকে ২.৫ টন/হেক্টর, বীজে তেলের পরিমাণ ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ, জীবনকাল ৯৫ থেকে ১০০ দিন। জীবনকাল কম হওয়ায় ধান ফসলের সঙ্গে রিলে ফসল হিসেবে চাষ করার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এ জাতের তেলে ইরুসিক এসিডের পরিমাণ ১.০৬ শতাংশ, সরিষা গাছের উচ্চতা ৮৮ থেকে ১২৬ সে.মি.। জাতটি বাংলাদেশে উদ্ভাবিত প্রথম 'ক্যানোলা' বৈশিষ্ট্যের। যেসব কৃষকেরা দীর্ঘমেয়াদি (১০০ থেকে ১১০ দিন) সরিষার জাত ব্যবহার করতে চান, তারা ঝাঁজমুক্ত বারি সরিষা-১৮ (ক্যানোলা জাত) ব্যবহার করতে পারেন যা রান্নার তেল হিসেবে ব্যবহার হয়। বারি সরিষা-১৮ জাতের তেলে ইরুসিক এসিডের পরিমাণ ১.০৬ শতাংশ যেখানে বর্তমান বাংলাদেশে চাষকৃত অন্যান্য উন্নত সরিষার জাতে ইরুসিক এসিডের পরিমাণ ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। পরিমাণ মতো সার ও সেচ প্রয়োগে এ জাত ২.০ থেকে ২.৫ টন/হেক্টর (৮ থেকে ১০ কেজি/শতাংশ) পর্যন্ত ফলন দেয়। বারি সরিষা-১৪ চেয়ে বারি সরিষা-১৮ শতাংশে প্রায় ২ থেকে ৬ কেজি বেশি ফলন দিয়ে থাকে। বর্তমান দেশে প্রায় ৫ দশমিক ৫ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয় যা প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন তেল পাওয়া যায়। এ দেশের কৃষকরা সাধারণত স্থানীয় জাতের সরিষার আবাদ করে থাকে যার হেক্টরপ্রতি গড় ফলন মাত্র ৮৫০ কেজি বা প্রতি শতাংশে ৩ দশমিক ৫ কেজি। তাই নতুন জাত আবাদে কৃষক আর্থিক ভাবে লাভবান হয় ও খুব সহজে তাদের প্রচলিত ফসল ধারায় খাপ খাওয়াতে পারেন।
এছাড়াও ২০১১ সালে বারি সরিষা-১৯ এবং ২০২২ সালে বারি সরিষা-২০ অবমুক্ত করা হয়। যেগুলোর জীবনকাল ৮০ থেকে ৯০ দিন এবং গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৫ থেকে ২.০ টন। উলিস্নখিত জাতের মধ্যে বারি সরিষা-১১, বারি সরিষা-১৬, বারি সরিষা-১৮ লবনাক্ত সহনশীল ৬-৮ ফং/স এবং বারি সরিষা-১৯ জাতটি ৮-১২ ফং/স মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে যা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চাষ উপযোগী। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও ভালো ফলন পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়ায় কৃষকরা এ সরিষা চাষে লাভবান হবেন।
অপরদিকে বারি সরিষা-২০ বাদামি রঙের বীজ ও অন্যান্য জাতের তুলনায় তেলের পরিমাণ ৩ থেকে ৪ শতাংশ বেশি। যেগুলোর প্রচলিত জাতের সরিষার স্থলে শুধু বারি উদ্ভাবিত সরিষার উলিস্নখিত জাতগুলো প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দেশের সরিষা উৎপাদন অনেকাংশেই বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে সাধারণত আমন ধান চাষের পর জমি পতিত থাকে এবং এরপর সেই জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়। তেল উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজন আমন ধানের পর জমি পতিত না রেখে স্বল্পমেয়াদি সরিষার আবাদ করা। এজন্য দেশের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে স্বল্প জীবনকালের (১০০ থেকে ১২০ দিন) অথচ উচ্চফলনশীল আমন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, যেগুলো মূল জমিতে চারা রোপণের মাত্র ৮০ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যেই সংগ্রহ করে ঘরে তোলা যায়। এরপর জমি পতিত না রেখে উন্নত জাতের সরিষা চাষ করা সম্ভব হচ্ছে, যেগুলো ৮০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হওয়ায় পরে একই জমিতে আবার বোরো ধান চাষ করে প্রচলিত দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলিতে রূপান্তর করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ২২ লাখ হেক্টর জমি আমন-পতিত-বোরো শস্য বিন্যাসের অন্তর্ভুক্ত (সূত্র : ডিএই)। স্বাভাবিক চাষাবাদ পদ্ধতিসহ শূন্যচাষ ও রিলে চাষ পদ্ধতিতে আবাদযোগ্য স্বল্প জীবনকালের বিএআরআই উদ্ভাবিত বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭ ও বারি সরিষা-২০ জাতের সরিষা শস্য বিন্যাসে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সাময়িক পতিত জমি সহজেই চাষের আওতায় আনা সম্ভব। এছাড়াও বারি সরিষা-১১, বারি সরিষা-১৬, বারি সরিষা-১৮ ও বারি সরিষা-১৯ আবাদের করে উলিস্নখিত জমির অনেকটাই শস্যবিন্যাস পরিবর্তন মাধ্যমে (আমন-সরিষা-তিল/বোরো ধান) অতিরিক্ত সরিষার উৎপাদন করে দেশীয় চাহিদার অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব। এই জাতসমূহ দেশের প্রায় ১ দশমিক ৭ লাখ হেক্টর চরের পতিত জমিতে সরিষার আধুনিক ও প্রতিকূলতা সহনশীল জাতের সরিষা চাষের আওতায় এনে অতিরিক্ত প্রায় ২ দশমিক ২ লাখ টন সরিষা উৎপাদন করা সম্ভব। বরিশাল ও খুলনাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলসহ অনেক জমিই এক ফসলি এবং ওইসব জমির অধিকাংশেই দীর্ঘ জীবনকালের আমন ধান আবাদ হয়ে থাকে, ফলে আমন ধান সংগ্রহ করতে হয় ডিসেম্বর মাসে এবং আমন ধান সংগ্রহের পর সব জমি পতিত থাকে। নাবিতে বপনোপযোগী বিএআরআই উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ও রোগপ্রতিরোধী জাতসমূহ যেমন- শূন্যচাষে বা প্রয়োজনে রিলে চাষ পদ্ধতিতে আবাদযোগ্য জাতগুলো সহজেই ওই এলাকায় সম্প্রসারণ করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
বাংলাদেশে সরিষা বপন-পরবর্তী অগ্রহায়ণ (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) মাসে নিম্নচাপজনিত বৃষ্টিপাতের কারণে জমিতে সাময়িক জলাবদ্ধতার কারণে দেশি জাতের সরিষা টরি-৭-সহ অন্যান্য উচ্চফলনশীল জাত নষ্ট হলেও বারি সরিষা-১৮ ও বারি সরিষা-১৯ জাতগুলো পাঁচ দিন পর্যন্ত সাময়িক জলাবদ্ধতা/জলমগ্নতা সহিষ্ণু হওয়ায় কৃষকরা ফসলহানি থেকে রক্ষা পাচ্ছে। কাজেই উচ্চফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি বারি সরিষা-১৪ ও বারি সরিষা-১৭-সহ বারি সরিষা-১৮ জাতের আবাদ নিশ্চিতকরণ এবং শস্যবিন্যাসে উলিস্নখিত সরিষার জাতগুলোর অন্তর্ভুক্তকরণসহ পতিত জমি ও চরাঞ্চলে সরিষার জাতগুলোর আবাদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ভোজ্যতেলের আমদানি-নির্ভরতা কমানো সম্ভব। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী ও সঠিক দিকনির্দেশনায় কৃষিবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং সুযোগ্য কৃষিমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণে দেশের ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমপক্ষে ৪০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অবশ্যই সম্ভব হবে। কৃষি সচিব এবং কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের নেতৃত্ব ও নির্দেশনা মোতাবেক তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআইয়ের বিজ্ঞানীরা পরিবর্তনশীল আবহাওয়া উপযোগী ও উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন যা উলিস্নক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বারি উদ্ভাবিত সরিষার জাতগুলোর বীজের সহজলভ্যের জন্য প্রয়োজন সরকারি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএডিসি ও বেসরকারি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উন্নতজাতের মানসম্পন্ন বীজ পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন। একই সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) মাধ্যমে সরিষা চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ, সরিষার সঠিক চাষাবাদ পদ্ধতি বিষয়ে কৃষক ভাইদের অবহিতকরণ ও মাঠপর্যায়ে মনিটর জোরদারকরণ ও যথাসময়ে বীজ সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদান।
ড. মো. মাহমুদুল হাসান খান : গবেষক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট