নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে দেশে দুই সপ্তাহ ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ২০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। আর এতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি (বিপিএম-৬) অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৯ কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজার ডলার বা ২০ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলারে। অন্যদিকে, গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৩২ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার ডলারে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাপ্তাহিক নির্বাচিত অর্থনৈতিক সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, এর আগে বারবার এটা আলোচনায় এসেছিল যে, ধারাবাহিকভাবে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ফলে রিজার্ভ সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রক্ষিতে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারির শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ফেব্রম্নয়ারি মাসের শুরুতে তা নেমে আসে ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে (বিপিএম-৬)। আগের সপ্তাহেও রিজার্ভের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৯৯৩ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার ডলার। তবে, মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এসে ১৬ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার যোগ হয়ে আবারও তা ২০ বিলিয়ন ডলার পার হয়েছে। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া সমীচীন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা-ডলার অদলবদল (সোয়াপ) সুবিধা চালুর ফলে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৩৭ কোটি ডলার জমা দিয়ে সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে। ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোট রিজার্ভ বেড়েছে ৩৭ কোটি ডলার।
আমরা মনে করি, রিজার্ভ সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এছাড়া এটাও বলা দরকার, এর আগে যেমন রিজার্ভ কমার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বাড়ছে উদ্বেগ- এমন বিষয়ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছিল। ফলে রিজার্ভ সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বলা দরকার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রধানত আমদানি ব্যয় মেটানো তথা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে ব্যবহার হয়। এ রিজার্ভ আর্থিক খাতের সক্ষমতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, বৈদেশিক ঋণ, প্রবাসী আয়, বৈদেশিক ঋণ বা সহায়তা রিজার্ভের উৎস। আবার আমদানি ব্যয় মেটানো, বৈদেশিক ঋণ-সুদ পরিশোধ, বিদেশে চিকিৎসা, শিক্ষাসহ হাজারও খাত রয়েছে ব্যয়ের ক্ষেত্রে। ফলে রিজার্ভ সংক্রান্ত পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি যে কোনো ধরনের উদ্বেগ নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
স্মর্তব্য যে, করোনা মহামারির মধ্যে আমদানি কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীরা দেশে ফেরার সময় সঞ্চিত অর্থ নিয়ে আসেন। অনেকে বিদেশে থেকেও বাড়িতে স্বজনদের কাছে অর্থ পাঠান। আর এতে রিজার্ভ সমৃদ্ধ হয়। ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। প্রসঙ্গত, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকের একাধিক সূত্র মতে, ওই সময় রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল হুন্ডি বন্ধ হয়ে যাওয়া। তখন অধিকাংশ দেশ করোনা মহামারির বিস্তার রোধে অন্য দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে যেমন ডলার বাড়তে থাকে। আবার আমদানি কমে যাওয়ার কারণে খরচের খাতও ছোট হয়ে আসে। কিন্তু করোনার পর যখন দেশে দেশে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার শুরু হয়, তখন উল্টো অবস্থা তৈরি হয়। আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকে। মূল্যস্ফীতি বাড়ে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তোলে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে রিজার্ভ বিক্রি করে আমদানি ব্যয় সামাল দিতে হয়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এর আগে এটা সামনে এসেছিল যে, রিজার্ভ ধরে রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও ঘাটতি কমছে না। অন্যদিকে, রিজার্ভ কমে যাওয়াটা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর না এটাও বারবার আলোচনায় এসেছে। ফলে যখন জানা যাচ্ছে, নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে দেশে দুই সপ্তাহ ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ২০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে- তখন এটি আমলে নিতে হবে। রিজার্ভ সংক্রান্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা এবং অর্থনীতিবিদরা যে বিষয়গুলো বলছেন, সেগুলো আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।