ভুল চিকিৎসায় মৃতু্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
খতনা করাতে গিয়ে মঙ্গলবার রাতে আহনাফ তাহমিদ নামে ১০ বছর বয়সি একটি শিশু মারা গেছে। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, অনুমতি না নিয়েই 'ফুল অ্যানেসথেসিয়া' দেওয়ায় তার মৃতু্য হয়েছে। দেড় মাস আগে খতনা করাতে গিয়ে আয়ান আহমেদ নামে আরও একটি শিশুর মৃতু্য হয়েছিল এবং তার পরিবারও একই অভিযোগ করেছিল। বাংলাদেশে কোনো ধরনের অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া ছাড়াই যুগ যুগ ধরে হাজামরা (যিনি খতনা করান) এ কাজ করে আসছেন। তবে গত কয়েক দশকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে সার্জারির মাধ্যমে খতনা করানোর চল বেশ বেড়েছে।
খতনা করাতে এসে মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে এক শিশুর মৃতু্যর ঘটনার পর সেখানে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার জন্য হাসপাতালের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের শুধু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন আছে। হাসপাতালের অনুমোদন নেই। তাই এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, চিকিৎসা সেবার দুর্দশার পেছনে অযোগ্যতা, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতি যেমন, তেমনি জনবলের ঘাটতিও কম দায়ী নয়। প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও টেকনিশিয়ান নেই হাসপাতালগুলোতে। মফস্বলে পদায়ন হলেও যেতে চান না অনেকে। সারাদেশে সরকারি হাসপাতালের আশপাশে লাখো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। যার ৯৫ ভাগ অবৈধ। যার অধিকাংশের মালিক রাজনৈতিক দলের নেতা। এক শ্রেণির ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে ডিউটি না করে সেখানে কাজ করেন। সব মিলিয়ে সারাদেশে চিকিৎসা সেবায় চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসা খাতে রীতিমতো নৈরাজ্য বিরাজ করছে। একদিকে মানুষ ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না; অন্যদিকে, ভুল চিকিৎসা ও ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ভুল চিকিৎসায় বা চিকিৎসা অবহেলায় প্রায়ই রোগীর মৃতু্য ঘটছে।
আমরা জানি, একজন চিকিৎসকের কাছে যখন একজন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন, তখন লিখিত থাকুক বা না থাকুক উভয়ের মধ্যে একটি অলিখিত সুনির্দিষ্ট চুক্তির সৃষ্টি হয়। সেখানে অর্থের বিনিময়ে বা বিনিময় ছাড়াই সেবা প্রদানের বিষয়টি মুখ্য হয়ে ওঠে। এই চুক্তি বলবৎ থাকা অবস্থায় চিকিৎসকের অবহেলার কারণে যদি কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে এ বিষয়ে তার আইনি প্রতিকার লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায়। আইনি পরিভাষায় 'মেডিকেল নেগলিজেন্স' বা চিকিৎসায় অবহেলা বলতে মূলত চিকিৎসক ও রোগীর চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত অন্য ব্যক্তিদের অবহেলাকেই বোঝায়।
চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে বিশ্বের অনেক দেশে টর্ট আইনে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে টর্ট আইনে বিচারের জন্য আদালতে ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই সাধারণত ফৌজদারি আদালতে অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তি চেয়ে বা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে হয়। এ কারণে এসব মামলার ক্ষেত্রে অন্য আইনগুলোতে থাকা অবহেলা ও ক্ষতিপূরণসংক্রান্ত বিধান এবং আদালতের নজিরের ওপর নির্ভর করতে হয়।
চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীর প্রতি অবহেলা করবেন না, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। নিজের বুদ্ধিমত্তা ও পেশাগত দক্ষতা প্রয়োগ করেই তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অধিক সাবধানতা অবলম্বন করার পরও কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সেটা ভিন্ন কথা। চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের অবহেলা ও উদাসীনতায় ভুল চিকিৎসায় মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়েছেন অনেক রোগী। আমরা মনে করি, যোগ্য লোককে যোগ্য জায়গায় বসাতে হবে। নইলে মৃতু্যর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়তে থাকবে। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।