কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। আর এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, নানা সময়ে প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে আসে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বলার অপেক্ষা রাখে না, কয়েক বছর ধরে বায়ুদূষণ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা। আর যখন এমনটি জানা যাচ্ছে যে, বছরের বেশিরভাগ সময়ই বিশ্বের শীর্ষে থাকছে ঢাকার বায়ুদূষণ- তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা যেমন জরুরি, তেমনি এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণেরও বিকল্প নেই।
আমলে নিতে হবে যে, বছরের বেশিরভাগ সময়ই বিশ্বের শীর্ষে থাকছে ঢাকার বায়ুদূষণ; আর এর ফলে বাড়ছে হৃদরোগ, ফুসফুসে ক্যানসার, শ্বাসকষ্টের মতো নানা রোগ। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছালে জনগণকে স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক পরামর্শ প্রদান করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বায়ুদূষণের মাত্রা বিবেচনায় পরিবেশ অধিপ্তরের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ সংক্রান্ত তথ্যও প্রচার করা হচ্ছে। জানা যায়, মঙ্গলবার 'বায়ুদূষণ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক পরামর্শ' শিরোনামে প্রচারিত পরিবেশ অধিদপ্তরের এক বার্তায় বলা হয়েছে, ঢাকার বায়ুদূষণ বায়ুমান সূচকে ৩০০-এর অধিক হলে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ঘরের বাইরে অবস্থানকারী জনসাধারণকে মাস্ক পরিধান করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিদের অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করা বা দূষণের মাত্রা বিবেচনায় অন্যবিধ পরামর্শ প্রদান করা হয়। এটাও জানানো হয়, বায়ুদূষণ বায়ুমান সূচকে ৩০০-এর কম হলে সতর্কতা প্রত্যাহার করা হবে। উলেস্নখ করা দরকার, দেশের বায়ুমানের অবস্থা পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও শিল্পঘন শহরগুলোতে ১৬টি কন্টিনিউয়াস এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং সিস্টেম হতে পরিবীক্ষণ ডাটা রিয়াল টাইম অটোমেশন পদ্ধতিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে নিয়মিত প্রচার করা হচ্ছে।
আমরা মনে করি, এই পরামর্শগুলো বিবেচনায় নিয়ে তার বাস্তবায়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। একইসঙ্গে বায়ুদূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানানো এবং বায়ুদূষণ রোধে সামগ্রিক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। লক্ষণীয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই)-এর তথ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার বায়ু দূষণের স্কোর ছিল ১৬৩, দিলিস্নতে স্কোর ছিল ১৬৬, ইতালিতে ছিল ১৭৭, চায়নায় ২১৭ এবং বায়ুদূষণে শীর্ষে অবস্থান করে পাকিস্তান। যার স্কোর ছিল ২৪০। এ অবস্থায় শহরের সবাই মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি বায়ুদূষণের ভয়াবহতা বিশ্লেষণপূর্বক প্রয়োজনীয় উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। মাস্ক পরার পরামর্শের পাশাপাশি এটাও আমলে নেওয়া দরকার, একদিকে বায়ুদূষণে প্রাণহানি শুধু নয়, নানা ধরনের অসুখ-বিসুখসহ জনসাধারণের জীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তেমনি এর আগে এমনটিও আলোচনায় এসেছিল যে, বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ইটভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের গবেষণায় উঠে এসেছিল, সারাদেশে ইটভাটা আছে প্রায় ৮ হাজার। আর ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে রয়েছে সাড়ে ৭০০টির বেশি। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, ইটভাটাগুলো প্রতি মৌসুমে ২৫ লাখ টন কয়লা ও ২২ লাখ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ায়। ইটভাটার দূষণে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ী বলেও তথ্য উঠে এসেছিল। এছাড়া বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে নির্মাণকাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলার কারণে, বিভিন্ন জিনিসপত্রসহ পস্নাস্টিক পোড়ানোসহ বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে নানা সময়ে। আমরা মনে করি, দূষণের কারণগুলো আমলে নিয়ে দূষণমুক্ত করতে যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি।
সর্বোপরি বলতে চাই, বছরের বেশির ভাগ সময়ই বিশ্বের শীর্ষে থাকছে ঢাকার বায়ুদূষণ- এটাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ বাড়ছে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছালে জনগণকে স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক পরামর্শ প্রদান করছে পরিবেশ অধিদপ্তর, এটির যেমন বাস্তবায়ন জরুরি। তেমনি বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বায়ুদূষণ রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।