তিন দিনের মিউনিখ শান্তি সম্মেলন শেষে সোমবার সকালে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে সম্মেলনটি ছিল বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এটাও আলোচনায় এসেছে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের মাধ্যমে কূটনীতিকে কাজে লাগাতে পারার বিষয়টি নতুন সরকারকে অনেক স্বস্তি দিয়েছে- যা ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। বলা দরকার, সম্মেলনের বাইরে সাইডলাইনের বৈঠকের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রকল্পে ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকার পাশাপাশি বাজেট সহায়তায় ৫ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকার প্রতিশ্রম্নতিও পাওয়া গেছে- যা আশাব্যঞ্জক। তবে আমলে নেওয়া দরকার, শান্তি সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের কাছে ছয়টি পরামর্শ বা দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। আরো সুখকর বিষয় হলো, এই প্রস্তাবগুলোর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নজর কেড়েছেন।
প্রথমে রয়েছে, সংবেদনহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করা এবং তার পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয় করা। যেখানে এটাও বলা হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো যে অঙ্গীকার করেছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে বার্ষিক ১ হাজার কোটি ডলারের বা ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার প্রতিশ্রম্নতি পালন করতে হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে উঠে এসেছে, বিশ্বকে যুদ্ধ ও সংঘাত, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিক বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নির্বিচার হত্যাকান্ড থেকে সরে আসার বিষয়টি। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, গাজায় বেসামরিক মানুষের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞকে 'গণহত্যা' হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে, বাংলাদেশ যে সব সময় গণহত্যার বিপক্ষে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, 'ফিলিস্তিনের জনগণের নিজস্ব রাষ্ট্র আর তাদের বাঁচার অধিকার রয়েছে। আমি মনে করি, এটি একটি গণহত্যা। ফলে আমরা কখনো একে সমর্থন দেব না।' জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশগ্রহণের ফাঁকে শনিবার তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদোলুকে সাক্ষাৎকার দেন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান। তিনি এটাও বলেছেন, 'গাজার মানুষের বাঁচার অধিকার রয়েছে। তাদের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞ খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ফলে আমাদের উচিত তাদের সাহায্য করা এবং তাদের ওপর আক্রমণ আর যুদ্ধ বন্ধ করা।
তৃতীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট দুর্যোগ প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য যে অর্থায়ন করা হয় তাতে প্রচন্ড ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। অভিযোজন অর্থায়নের বর্তমান হারকে অন্তত দ্বিগুণ করতে হবে। চতুর্থ প্রস্তাবে রয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিদ্যমান আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল পাওয়ার পথ সুগম করার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান করা। পঞ্চম পরামর্শে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক অর্থায়নে সংস্কার করা। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ পরামর্শে রয়েছে, জলবায়ু কর্মের জন্য ব্যক্তিগত পুঁজি প্রবাহকে একত্রিত করতে সরকারগুলোকে সঠিক পরিকল্পনা ও নীতি গ্রহণ এবং উপকরণে বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবগুলো আমলে নিতে হবে এবং এসব প্রস্তাবের গুরুত্ব অনুধাবন করে বিশ্ব নেতৃত্বকে এগিয়ে আসতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বিশ্বকে যুদ্ধ ও সংঘাত, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিক বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নির্বিচার হত্যাকান্ডের ভয়াবহতা কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে প্রধানমন্ত্রী এর পরিপ্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো আলোকপাত করেছেন, তার গুরুত্ব অনুধাবন করার বিকল্প নেই। এছাড়া সংবেদনহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করা এবং তার পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই কতটা জরুরি সেটিও অনুমান করা কঠিন নয়। সঙ্গত কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছেন তার তাৎপর্য অনুধাবন করে, বিশ্ব নেতৃত্ব এবং সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।