মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জলবায়ু শরণার্থী অভিবাসনের জোয়ার ক্রমবর্ধমান

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ পরিবেশগত অবনতির বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। জরুরিভাবেই মানবিক মূল্য এবং বিশ্বব্যাপী সংহতি ও সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন- যা একটি প্রখর অনুস্মারক হিসেবে কাজ করবে। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের দুর্দশা মোকাবিলায় ব্যর্থতা কেবল লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে বিপন্ন করে না বরং ক্রমবর্ধমান আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে ন্যায়বিচার, ন্যায়পরায়ণতা এবং মানবাধিকারের মৌলিক নীতিগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
মো. মাহির দাইয়ান
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
জলবায়ু শরণার্থী অভিবাসনের জোয়ার ক্রমবর্ধমান

ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মুখে বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও চরম আবহাওয়ার বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এর ভয়াবহ পরিণতিতে একটি জাতির মর্মান্তিক উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশ শীর্ষে দাঁড়িয়ে আছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে জলবায়ু অভিবাসীদের দুর্দশা ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। জীবনের নিরাপত্তা ও সার্বিক ভরণপোষণ নিশ্চিতে লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

বাংলাদেশ, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার নিচু ব-দ্বীপে অবস্থিত- যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের জন্য তীব্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। দেশটি ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং ক্ষরার সম্মুখীন হচ্ছে- যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। এতে বেড়ে যাচ্ছে লাখ লাখ জীবন ও জীবিকার ঝুঁকি। ইন্টারনাল ডিসপেস্নসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি)-এর তথ্য অনুসারে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচু্যতিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষাবস্থানে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে জনসংখ্যার একটি উলেস্নখযোগ্য অংশের বাসস্থান। এসব এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য অনেকটা সংবেদনশীল। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উর্বর জমিগুলোতে নোনা জলের অনুপ্রবেশ ঘটছে। ফলে কৃষিজমি অনুর্বর এবং স্বাদু পানির উৎসগুলো পানের অযোগ্য হয়ে উঠছে। ফলস্বরূপ কৃষক এবং জেলেরা ইতোমধ্যেই গভীর অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং অবস্থান করছে দেশের দরিদ্রতা সীমার নিচে। তাদের মধ্যে অনেককে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পরিত্যাগ করতে এবং কাজের সন্ধানে নগর কেন্দ্রে স্থানান্তর করতে বাধ্য করছে।

রাজধানী শহর ঢাকা, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য হয়ে উঠছে দেশের সবচেয়ে চুম্বক অংশ। এ শহরে বাসস্থানের জন্য তারা একত্রিত হচ্ছে বস্তিগুলোতে। ফলে কালক্রমে জমজমাট বস্তিগুলো ফুলে ফেঁপে অতিকায় আকার ধারণ করেছে। অভিবাসীদের আগমন ইতোমধ্যেই রাজধানীর সীমিত সম্পদগুলোত চাপ সৃষ্টি করেছে। এতে বৃদ্ধি পাচ্ছে সার্বিক দারিদ্র্যতা এবং তীব্রতর হচ্ছে সামাজিক উত্তেজনা। অধিকন্তু, দ্রম্নত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এই জনগোষ্ঠীর দুর্বলতাকে প্রসারিত করছে। কারণ অস্থায়ী বসতিগুলো বন্যা এবং ভূমিধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত।

পর্যাপ্ত সরকারি উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাবের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং অভিযোজন ব্যবস্থায় অগ্রগতি অর্জন করেছে তবুও চ্যালেঞ্জের মাত্রা নিরপেক্ষ রাখতে সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপের প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আর্থিক সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দ্বারা শক্তিশালী টেকসই উন্নয়ন উদ্যোগগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো প্রশমিত করতে এবং দুর্বল সম্প্রদায়ের স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করতে অপরিহার্য।

বাংলাদেশে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের দুর্দশা মোকাবিলার জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতির বহিঃপ্রকাশ প্রয়োজন- যা প্রশমন, অভিযোজন ও মানবিক সহায়তাকে একত্রিত করবে। বর্ধমান পরিবেশগত অবক্ষয় সীমিত করতে এবং ভবিষ্যতের স্থানচু্যতি হ্রাস করতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে। একইসঙ্গে, ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করতে এবং আরও টেকসই জীবিকার জন্য তাদের স্থানান্তর সহজতর করতে জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো, জীবিকার বৈচিত্র্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা জালে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ প্রয়োজন।

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ পরিবেশগত অবনতির বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। জরুরিভাবেই মানবিক মূল্য এবং বিশ্বব্যাপী সংহতি ও সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন- যা একটি প্রখর অনুস্মারক হিসেবে কাজ করবে। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের দুর্দশা মোকাবিলায় ব্যর্থতা কেবল লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে বিপন্ন করে না বরং ক্রমবর্ধমান আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে ন্যায়বিচার, ন্যায়পরায়ণতা এবং মানবাধিকারের মৌলিক নীতিগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

মো. মাহির দাইয়ান : নবীন লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে