সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সড়কে মৃতু্যর মিছিল

কার্যকর উদ্যোগ নিন
  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সড়কে মৃতু্যর মিছিল

সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ- তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, টাঙ্গাইলের গোপালপুর ও মধুপুর উপজেলায় পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় মা-ছেলেসহ চারজন নিহত হয়েছেন। শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইল-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মধুপুর উপজেলার নেকিবাড়ী এলাকায় দু'টি মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। এর আগে সকালে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের চাপায় মোটর সাইকেল আরোহী মা ও ছেলে নিহত হন।

এটাও উলেস্নখ্য, ছুটির দিনে সারাদেশে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত হওয়ার খবর জানা গেছে। শুক্রবার ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ময়মনসিংহে সাত, জামালপুরে দুই, মেহেরপুরে এক, ফরিদপুরে এক, চুয়াডাঙ্গায় এক, মৌলভীবাজারে দুই, বগুড়ায় তিন ও কুমিলস্নায় একজন রয়েছেন বলেও জানা যায়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্য করা যায়, মোটর সাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ, যাত্রীবাহী বাসের চাপা, বাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষ, মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের ধাক্কা, বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলে মুখোমুখি সংঘর্ষ, ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

আমরা বলতে চাই, যেভাবে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে এবং বেড়ে চলেছে লাশের সংখ্যা- তা সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। বরং সড়ক কতটা ভীতিপ্রদ হয়ে উঠেছে তা আমলে নিতে হবে। যখন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। একইসঙ্গে যেসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তা বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এর আগে বারবার এমন বিষয়ও সামনে এসেছে যে, বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, সড়কে চাঁদাবাজি ও রাস্তার পাশে হাটবাজারও বাড়িয়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমনটিও সামনে এসেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। অন্যদিকে, কেন সড়ক নিরাপদ হচ্ছে না, কেন বাড়ছে লাশের সংখ্যা- এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। স্মর্তব্য, এর আগে এমন বিষয় আলোচনায় এসেছ যে, সড়ক দুর্ঘটনার ডজন দুয়েক কারণ চিহ্নিত করা হলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় মৃতু্যর মিছিল থামছে না। বরং সড়কে লাশের সারি দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আর তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটাও এড়ানোর সুযোগ নেই, গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন- দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সড়কে মৃতু্য কমছে না।

সর্বোপরি বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। ফলে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে তা আমলে নিতে হবে এবং দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে সড়ক নিরাপদ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে