প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ও সচিবদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দেওয়া ইশতেহারকে ভিত্তি ধরে আগামী পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা সাজাতে বলেছেন। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, পণ্য পরিবহণে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন।
টানা চতুর্থবার সরকার গঠনের পর ৫ ফেব্রম্নয়ারি সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিবদের নিয়ে বৈঠক করেন সরকারপ্রধান। বৈঠকে পরিকল্পনা সাজানোর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারকে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে একটা ধারাবাহিকতা আছে। ২০৪১ সাল নাগাদ 'স্মার্ট' ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চায় সরকার। সে ইশতেহারের পক্ষে জনগণ রায় দিয়েছে। তাই এ নির্বাচনী ইশতেহার হবে আগামী পাঁচ বছরের সরকার পরিচালনার মূলনীতি। এ দলিল বাস্তবায়নে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সমন্বয়ের কাজ করবে। কোন মন্ত্রণালয়ের কী কাজ, তা চিহ্নিত করা হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ ভাগ করা হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে 'স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান' স্স্নোগানে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আর্থিক খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলাসহ মোট ১১টি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রম্নতি দেয় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের এবারে নির্বাচনী ইশতেহারে মোট ১১টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সেগুলো হলো : ১. দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। ৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো। ৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৭. নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। ৮. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা। ৯. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা। ১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
আওয়ামী লীগ যেসব প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। সেগুলো হলো: জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্পবিপস্নবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সমাজ গঠনের মাধ্যমেই মূলত 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ে তোলা হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করা হবে। আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত করা হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারতিা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার ধারা অব্যাহত রাখা হবে। জনকল্যাণমুখী, জবাবদিহিতামূলক, দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। জনবান্ধব, স্মার্ট ও আধুনিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলা হবে। এক্ষেত্রে বাহিনীগুলোর দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। প্রশাসনে দুর্নীতি নিরোধের লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণ করা হবে। সন্ত্রাস দমনের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা আরও সম্প্রসারণ করা হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতের গুরুত্ব অব্যাহত রাখা হবে। এছাড়া যুক্তিসংগত ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ ব্যবহার করা হবে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমন করা হবে। এক্ষেত্রে পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সহযোগিতায় পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে তরুণদের প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৩১ লাখ যুবকের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষিতে সহায়তা ও ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রাখা হবে। শিল্প উন্নয়ন ও বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া অব্যাহত রাখা হবে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্যাস ও এলপিজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ আরও প্রসারিত করা হবে। মৌলিক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবা উন্নত ও সম্প্রসারিত করা হবে। এ লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি নাগরিককে একটি ইউনিক হেলথ আইডি দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা, দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং পানিসম্পদ রক্ষায় ইতোমধ্যেই যেসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা হবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি এই অঞ্চল থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়া টাস্কফোর্স গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আওয়ামী লীগ।
টানা চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতায় আসার আগে যেসব প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নে মনোযোগী দলটি। ইশতেহার বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ বরাবরই অটল। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই দল জনগণকে দেওয়া কথা রেখে আসছে প্রতি মেয়াদেই।
আওয়ামী লীগ গত নির্বাচনে যেসব প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল, তার সব বাস্তবায়ন করেছে। করোনাকালের মতো একটি সংকটময় দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ সরকার দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। পাশাপাশি উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাগরিকদের করোনার টিকার ব্যবস্থা করেছে- যা বিশ্বের অনেক দেশই পারেনি।
'আমার গ্রাম আমার শহর' স্স্নোগান বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদু্যৎ রয়েছে। এতে গ্রামে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। দেশ ডিজিটাল হয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলো দ্রম্নত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, বিদু্যৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বস্নু-ইকোনমি-সমুদ্রসম্পদ উন্নয়ন, নিরাপদ সড়ক। এগুলো সব বাস্তবায়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল- যারা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে।
দেশের মানুষকে যেসব প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে- আওয়ামী লীগ তা বাস্তবায়নে কাজ করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে ইশতেহার দিয়েছে তাও শতভাগ বাস্তবায়ন হবে ইনশাআলস্নাহ।
মো. খসরু চৌধুরী : সংসদ সদস্য, ঢাকা-১৮। শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর, উত্তর আওয়ামী লীগ