মূল্যস্ফীতি

সঠিক পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতির হার কমানো যাচ্ছে না। গত বছরের শেষ দুই মাসের ধারাবাহিকতা নতুন বছরে থাকল না। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে পৌঁছানোর খবর দিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস)। অর্থাৎ গত বছরের জানুয়ারি মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, তা এ বছরের জানুয়ারিতে পেতে ১০৯ টাকা ৮৬ পয়সা ব্যয় করতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিবিএস অনলাইনে মূল্যস্ফীতির এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। গত বছরের শেষ দুই মাস নভেম্বর ও ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার কমে যথাক্রমে ৯ দশমিক ৪৯ এবং ৯ দশমিক ৪১ শতাংশে নেমেছিল। তার আগের মাস অক্টোবরে এই হার উঠেছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে। আর গত বছরের মে মাসে এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠেছিল মূল্যস্ফীতির পারদ। গত বছরের জানুয়ারি মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সে হিসাবে গত বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় সাধারণ মূল্যস্ফীতি এ বছরের জানুয়ারি মাসে ১ দশমিক ২৯ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে শীতকালীন সবজি ও চালের দাম গত বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি ছিল। বিশেষ করে পেঁয়াজ, রসুনসহ সব ধরনের সবজি গত বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি থাকায় জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গত বছরের অক্টোবর মাসে আলু, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার কারণে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। অথচ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশের মধ্যে। অক্টোবর মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বর মাসে এ খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে। আর অক্টোবর মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বৈশ্বিক মন্দায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছিল। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদা কমানো হয়। পণ্যের দাম কমাতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে অনেক দেশে বিশেষ করে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে- বাংলাদেশে এ হার রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও বিপরীত চিত্র দেশের বাজারে। বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যসহ সব পণ্যের দাম এখনো অস্থিতিশীল। ফলে নিয়ন্ত্রণে আসছে না মূল্যস্ফীতির হার। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি কমলেও বাংলাদেশে তা কমানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের বেঁধে দেয়া দামও মানা হচ্ছে না। বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা মনে করি, বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে। কেবল রমজানে নয়, সারা বছর বাজার মনিটরিং করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকর কঠোর উদ্যোগই কেবল পারে জনগণতে হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে। এই মুহূর্তে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সঠিক পদক্ষেপ জরুরি।