একুশে ফেব্রম্নয়ারি বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি দিবস মাত্র। এর ইতিহাস কী? তাৎপর্য কী? তা যেন এক উপেক্ষিত বিষয়। আর বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে এই দিনটি নিয়ে কতটুকুই বা ধারণা আছে। সেটা আজ সত্যিই পর্যালোচনার বিষয়।
একুশে বইমেলা ২০২৪-এর একটি ভিডিও কন্টেন্ট ইতোমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। সেখানে একুশে বইমেলায় ঘুরতে আসা নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সাংবাদিক বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো নিয়ে প্রশ্ন করছে, কিন্তু কেউই সঠিক উত্তর দিতে পারছে না। এমনকি একুশে ফেব্রম্নয়ারি তথা একুশে বইমেলা কী, সেটাও বলতে পারছে না। সাংবাদিক থেকে বলা হচ্ছে, একুশে ফেব্রম্নয়ারি কবে সংঘটিত হয়? তারা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছে ১৯৭২ সাল, কেউ বলছে ১৯৭১ সাল, কেউ কেউ বলছে ১৯৪৮, ১৯৫০ কিংবা ১৯৬৬ সাল ইত্যাদি। বলা হচ্ছে, একুশে ফেব্রম্নয়ারি আসলে কী? শিক্ষার্থীরা বলছে, এই দিন যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে বাঙালিরা। কি আশ্চর্য প্রশ্নোত্তর! কোথায় যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম? আর কিইবা শিখছে? কিংবা শেখানো হচ্ছে।
একুশে ফেব্রম্নয়ারি সকাল সকাল খালি পায়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়া এটি একটি প্রচলিত অনুষ্ঠানের মতোই হয়ে গেছে। আসলে এর ইতিহাস কী? তাৎপর্য কী? তা আজ দারুণভাবে উপেক্ষিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তরুণ প্রজন্মের কাছে। ফেব্রম্নয়ারি আসলেই আমরা বাংলা ভাষার চাষি হয়ে যাই। আর ভাষার মাস পেরোলেই আবার পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে গা ভাসাই। ভাষার মাস আসলেই পরনে অ আ ক খ বর্ণমালার পাঞ্জাবি, শাড়ি কিংবা টি-শার্ট। আর মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে মুখস্থ বুলি কয়েকটা বাংলা কবিতার লাইন আওড়াই। এটাই যেন আজকের ঐতিহ্য।
অনেক জায়গায় দেখা যায়, ভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ভিনদেশি ভাষার গান ও সংস্কৃতিতে মেতে ওঠে আজকের প্রজন্ম। যা আমাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্যের পরিপন্থি। আমাদের ভাষাসৈনিকরা সংগ্রাম করেছে ভিনদেশি ভাষাচর্চার মাঠ গড়তে নাকি শুদ্ধ বাংলাচর্চা করতে, সেটাই অজানা আমাদের নতুন প্রজন্মের জনগোষ্ঠীর কাছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটিকে শুধুমাত্র ফুল দিয়ে পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সব শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুরো মাসজুড়ে এর ইতিহাস তুলে ধরা দরকার। আমদের উচিত, তরুণ প্রজন্মের কাছে একুশে ফেব্রম্নয়ারির মূল ইতিহাস তুলে ধরা। সভা-সেমিনারের আয়োজন করা। বাংলা ভাষায় বইপাঠ, বক্তৃতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
পৃথিবীতে একটি মাত্র দেশ বাংলাদেশ। যারা তাদের ভাষার জন্য লড়েছে। কিন্তু সেই ভাষা আজ ভিনদেশি ভাষার খপ্পরে পড়ে কলুষিত হচ্ছে। যা রক্ষা করা আজকের প্রজন্মের খুব জরুরি। এ জন্য সবার উচিত, বাংলা ভাষার চাষি হয়ে এই ভাষার মান ও মর্যাদা রক্ষায় নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তির বহিঃপ্রকাশ করা। সর্বোপরি সবার উচিত, সচেতন হয়ে ভাষার জন্য কাজ করা। নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষার সঠিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। অন্যথায় এই ভাষা; এই দিবসের সঠিক ইতিহাস ও তাৎপর্য কালের পরিক্রমায় একদিন হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। তখন হাজার চেষ্টায়ও তা আর ফেরানো সম্ভব হবে না।
জাকারিয়া আল হোসাইন
শিক্ষার্থী
নীলফামারী সরকারি কলেজ