কোনো বিষয় পরিস্কারভাবে বুঝা, শিখা ও চিন্তা করার ক্ষমতাই হলো মেধা। ব্যক্তির অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, সৃজন-শক্তির সমন্নিত গুণাবলিকে মেধা হিসেবে অবহিত করা হয়। মেধার সাহায্যে ব্যক্তির নানা বিষয়ে যোগ্যতা পারদর্শিতা হয়ে উঠতে পারে। ব্যক্তি জীবনেই নয়, সঠিক মেধার চর্চায় পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিষয়েও মেধার প্রভাব প্রতিফলিত হয়।
জাতি ও দেশের উন্নয়নে সেই মেধা সহায়ক হয়। মেধা ব্যক্তি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য একটি অতীব-গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। মেধা শিক্ষাগত যোগ্যতাকে এক করা ঠিক নয়। শিক্ষাগত একাডেমিক যোগ্যতাকে মেধার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা সঠিক মনে করি না। অনেকের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সার্টিফিকেট আছে। কিন্তু তার মেধা শক্তি দুর্বল, চিন্তা-চেতনায় তীক্ষ্ন বুদ্ধিমত্তা প্রখর নয়। আবিস্কার ও উদ্ভাবন শক্তি তার মধ্যে নেই। চিন্তা-চেতনায় বুদ্ধিমত্তায় অনেকের মধ্যেই প্রয়োজনীয় মেধা বিকশিত হয় না।
আবার স্বল্পসংখ্যক মানুষ তার মেধাকে বিকশিত করে লেখালেখি, শিল্পী, সাহিত্য উদ্ভাবনি, সৃজনশীল কর্মকান্ডকে প্রতিভার মাধ্যমে বিকশিত করে থাকে। তারা তাদের নিজস্ব মেধা ও যোগ্যতায় উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হন। সমাজে, বিদ্যালয়ে দেখতে পাই, একটি ক্লাসে বহু ছাত্র। টিচার ক্লাস নিচ্ছেন, পড়া দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ শিক্ষকের ক্লাসের দিকে আছে, আবার কতিপয় শিক্ষার্থী অমনোযোগী হয়ে ক্লাসে সময় পার করে। সেখানেই ধনী-গরিব পরিবার সামর্থ্য-অসামর্থ্যবান পরিবার হিসেবে কোনো শিক্ষার্থীকেই অর্থ-সামর্থ্যের মাপকাঠি দেখা হয় না। তবুও সেই ক্লাস থেকে মেধাবি চরিত্রবান লেখক, সাহিত্যিক, কবি, প্রবন্ধকার উঠে আসে। মেধা যোগ্যতায় সৃজনশীল কর্মকান্ড চিন্তা শক্তির বিকাশেই উদ্ভাবন হয়।
সমাজচিন্তক উদ্ভাবক বিদ্বান কবি, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী সবাই হতে পারে না। মেধা পরিশ্রম সাধনা যোগ্যতার ফলে এসব গুণী মানুষ তৈরি হয়। সেই মানুষগুলোর পেছনে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অসংখ্য ত্যাগ থাকে। যখন দেখা যায়, মেধাবী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, প্রফেসর দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যান। সেই চিত্র সংখ্যা যখন অভিভাবক, সমাজ, প্রতিনিধি, দেশপ্রেমিক মানুষ দেখে তখন মানসিক যন্ত্রণা ধরে রাখা সম্ভব হয় না। মনের প্রশান্তি আরাম বিলাসিতা দূর হয়ে যায়। আমার দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে অথবা মাঝপথে শিক্ষাগ্রহণ করার জন্য কেন বিদেশভ্রমণ করবে। তার সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে মেধা ও অর্থ।
ফলে হাজার হাজার, লাখ লাখ মেধাবী সার্টিফিকেটধারী যোগ্য যুবক-যুবতী বেকার ও অলস জীবনযাপন করছে। তারা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হিসেবে বেঁচে থাকছে। সে সুযোগে আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান পরিবারের সন্তানরা দেশ ত্যাগ করছে, সঙ্গে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে যাচ্ছে। আর যারা মেধাবী অথচ বেকার কর্মসংস্থান হচ্ছে না, তাদের একটি মহল বিপদগামী করছে। মাদক, নেশা, অপরাজনীতি তথাকথিত রাজনীতির নামে ব্যবহার করছে। যার কারণে শিক্ষিত মেধা পাচার বাড়ছে। রাষ্ট্রীয় জাতীয় পরিকল্পনা কর্মসূচিতে শিক্ষিত মেধাবী যোগ্য নির্দিষ্ট বয়সের বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ বলার মতো নেই।
শিক্ষা সমাজের পর শিক্ষার্থীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে সব শিক্ষিত মানুষগুলোর কর্মসংস্থান তৈরি করা চাই। ফলে মেধা যোগ্যতা ও অর্থ পাচার বন্ধ হবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সামাজিক রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষা হবে। মেধার বিকাশ হবে। জাতীয় অর্থনীতি অগ্রগতি উন্নয়ন ও রাষ্ট্রীয় সাফল্য অর্জিত হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও উন্নত জাতি গঠনে মেধাযোগ্য মানুষের মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠা হোক।