জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের জোগান কম থাকায় রেশনিং করে খাতভিত্তিক গ্যাসের সরবরাহ করছে জ্বালানি বিভাগ। আর এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে শিল্প ও বিদ্যুৎ খাত। কিন্তু আমলে নেওয়া দরকার, শিল্পোদ্যোক্তাদের দাবি, এখনো চাহিদার অর্ধেক গ্যাস পাচ্ছে না বেশিরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে চলতি মাসেই বিদ্যুতের চাহিদা আরও ২-৩ হাজার মেগাওয়াট বাড়তে পারে। আর এই বর্ধিত চাহিদা পূরণে বাড়ানো হতে পারে গ্যাসের সরবরাহ। সার্বিকভাবে শিল্পখাতে তৈরি হয়েছে নতুন শঙ্কা এমনটি জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, শিল্পসহ দেশের বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের সংকট দীর্ঘদিনের। অন্যদিকে গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তথ্য মতে, মূলত এলএনজি টার্মিনাল ও পাইপলাইন সংস্কারের কারণে সারাদেশে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, যদিও পাইপলাইন বন্ধের কারণে দিনে মাত্র ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। যেখানে দিনে চাহিদা ৪শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। এছাড়া দেখা গেছে যে, স্থানীয় উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকায় জাতীয় গ্রিডে চাহিদার থেকে জোগান ক্রমেই কমছে।
আমরা বলতে চাই, যখন জোগান কমছে এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎসহ সব ধরনের শিল্প ও উৎপাদনমুখী খাতেÑ তখন পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের সেটা অনুধাবন করা জরুরি। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি এমনটিও জানা গেছে। আর এর বাইরেও সিএনজি ও আবাসিক গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়াবে কয়েকগুণ এটাও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সংকট নিরসনে শিল্পোদ্যোক্তরা দীর্ঘদিন ধরেই জোড় দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরবরাহ স্বাভাবিক করা না গেলেও শিল্প এবং বিদ্যুৎ খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তদুপরি অগ্রাধিকারেও সংকট কাটছে না, যা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।
স্মর্তব্য যে, এর আগে গ্যাস সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি বিশ্লেষকরা বলেছিলেনÑ দ্রæত সময়ের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে। এছাড়া ডলার মূল্য ও জ্বালানির দামের ওঠানামায় এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুণ এমন আলোচনাও উঠে এসেছিল। যা আমলে নেওয়া দরকার। লক্ষণীয়, মার্চের শুরুতেই বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদা এমনটি জানা যাচ্ছে। বর্তমানে ৪-৫ হাজার মেগাওয়াট গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকলেও এখাতে গ্যাসের চাহিদা আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে শিল্পে বিদ্যমান গ্যাসের সরবরাহ নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সৃষ্ট পরিস্থিতি যেমন উদ্বেগের তেমনি জানা যাচ্ছে, দেশে গ্যাসের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে অন্তত ২ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী। যদিও বর্তমান সংকট নিরসনে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আর এই নীতিমালা অনুযায়ী শিল্প ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা যায়।
আমরা মনে করি, চলমান গ্যাস সংকট আমলে নেওয়া এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এটাও এড়ানো যাবে না, দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন নিম্নমুখী। আমদানির মাধ্যমে এই ঘাটতি মেটানো হলেও এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। মূলত আমদানি গ্যাস পরিবহণ ও মজুতের বিদ্যমান অবকাঠামোগত সক্ষমতার চেয়ে ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। আর এ অবস্থায় একমাত্র নিজস্ব গ্যাসের উত্তোলন বৃদ্ধি ছাড়া গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, চলমান গ্যাস সংকটের সার্বিক অবস্থা আমলে নিতে হবে। অগ্রাধিকার দেওয়ার পরেও ৪০-৪৫ শতাংশ গ্যাসের সরবরাহ মিলছে। ফলে উৎপাদন ব্যয় ২ থেকে আড়াইগুণ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে বলেও জানা যায়। এছাড়া কেউ কেউ ৩ শিফটের পরিবর্তে মাত্র ১টি শিফট ফ্যাক্টরি চালাচ্ছে। ফলে আর্থিক লোকসানের পাশাপাশি রপ্তানি বাজার হারানোর শঙ্কাও রয়েছেÑ এমন আলোচনাও আসছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।